পরিবারের সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রবাসীরা বিদেশ থেকে নিয়ে আসেন নানা উপহার। তাতে ভারি হতে থাকে লাগেজ।
গত ক’দিনে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘুরে দেখা গেছে টার্মিনাল থেকে কোনো ট্রলি বাইরে নিতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে নিরুপায় হয়ে কাঁধে করেই মালামাল বাইরে আনতে হচ্ছে তাদের। দীর্ঘ যাত্রার পর দেশে নেমেই তাদের এমন কষ্ট আর বিড়ম্বনায় ফেলার ব্যবস্থাটি করে রেখেছেন খোদ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
যেসব যাত্রী বিত্তবান তাদের অবশ্য এসব দুর্ভোগে পড়তে হয় না। কেননা স্বজনেরা আগে থেকে গাড়ি নিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষারত থাকেন। কিন্তু সব দুর্ভোগ পোহাতে হয় দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়কারী খেটে খাওয়া প্রবাসী শ্রমিকদের। তাদের জন্য তো আর কেউ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষমাণ থাকেন না!
বিমানবন্দরের ভিতরে এয়ারপোর্ট সার্ভিস থেকে গাড়ি ভাড়া করা গেলেও সেজন্য প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হয়। একারণে এতোদিন তারা ট্রলিতে করে মালামাল বাইরে এনে সিএনজি বা বাইরের প্রাইভেটকার ভাড়া করতেন তারা। কিন্তু এখন আর কপালে সেই সুখটুকুও নেই তাদের। এখন আর ট্রলি টার্মিনালের বাইরে আনতে দেয়া হচ্ছে না। তাই ঘাড়ে করেই মালামাল বহন করতে হচ্ছে তাদেরকে।
ফেনী জেলার সৌদি আরব প্রবাসী সানাউল্লাহ ভুঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, দুই বছর পর দেশে ফিরছি। স্বজনদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে আসায় লাগেজ হয়েছে দু’টি। এখন ট্রলি বাইরে নিতে দিচ্ছে না আনসার সদস্যরা। বাধ্য হয়ে এয়ারপোর্ট সার্ভিস থেকে গাড়ি ভাড়া করলাম। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টর যেতেই ১ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হলো। অথচ আজমপুর থেকে ফেনী পর্যন্ত ‘স্টার লাইন’র এসি গাড়ির ভাড়া ৩২০ টাকা।
কুমিল্লার আসাদ ফিরেছেন দুবাই থেকে। তাকেও পড়তে হয়েছে একই বিড়ম্বনায়। একই সাথে আনসার সদস্যদের দুর্ব্যবহার নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই প্রবাসী।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখানের কর্মকর্তারা আমাদেরকে তো মানুষই মনে করেন না। তারা আমাদেরকে বলেন ‘কামলা’! ট্রলিতে লাগেজ নিয়ে বাইরে গাড়ি ভাড়া করতে যাচ্ছিলাম, এতেই এক আনসার সদস্য এমনভাবে ঝাড়ি দিলেন মনে হলো আমরা এদেশের কেউ না। আমি তো জানি না যে নতুন নিয়ম হয়েছে বাইরে ট্রলি নেওয়া যাবে না। উনি সেভাবে বললেই পারতেন!
আসাদ বলেন, আমি নিষেধ করায় গ্রাম থেকে কেউ এয়ারপোর্টে আমাকে রিসিভ করতে আসেনি। এখন লাগেজ টার্মিনালে কার কাছে রেখে গাড়ি ভাড়া করতে যাবো, এজন্য ঘাড়ে নিয়েই বের হয়েছি।
তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রথমে একটু কষ্ট হলেও যাত্রীদের বা প্রবাসীদের সুবিধার্থেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। এর দীর্ঘ মেয়াদি সুফলও রয়েছে।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক এয়ার কমোডর গ্রুপ ক্যাপ্টেন কাজী ইকবাল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ট্রলি বাইরে নিতে দিলে যাত্রীরা গোলচত্বর পর্যন্ত নিয়ে যান। আর সেখানে সড়কে রেখেই তারা চলে যান। এতে পরের যাত্রীরা এসে ট্রলি পান না। তখন খুবই ঝামেলা হয়। এজন্য যাত্রীদের কথা চিন্তা করেই এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। এখন টার্মিনালের ভিতরে সকলেই ট্রলি পায়।
বাইরে মালামাল বহনে সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, খুব দ্রুতই পার্কিং পর্যন্ত ট্রলি নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৮
এসআইজে/জেএম