ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ভুলে-যাওয়ার-রোগে ভুগছে অপরাষ্ট্র পাকিস্তান!’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৮
‘ভুলে-যাওয়ার-রোগে ভুগছে অপরাষ্ট্র পাকিস্তান!’ ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: কোনো সদস্য দেশ রাজি না হওয়ায় পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে হচ্ছে না। আর এজন্য বাংলাদেশের ঘাড়েই সব দোষ চাপালেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ। নিজের করা সাম্প্রতিক এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের প্রতি তার দেশ পাকিস্তানের পুরনো বিদ্বেষ ও শত্রুতার মনোভাবেরই বহির্প্রকাশ ঘটালেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে বেফাঁস কথা বলে উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করার বদভ্যাস ‘অকার্যকর রাষ্ট্র’ ও ‘সন্ত্রাসের মদদদাতা রাষ্ট্র’ হিসেবে পরিচিত দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নতুন নয়।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন হঠকারি, কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।

রোববার (২১ জানুয়ারি) ইস্ট-ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে একান্ত আলাপচারিতায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের বিষয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে অভিমত জানতে চাইলে এ মন্তব্য করেন তিনি। তার সঙ্গে আলাপচারিতার চুম্বক অংশ এখানে প্রশ্ন ও উত্তরের আকারে তুলে ধরা হলো:

প্রশ্নঃ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ পাকিস্তানে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন না হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে দুষলেন। আপনি কি মনে করেন?
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজঃ পাকিস্তান স্মৃতিভ্রম বা ভুলে-যাওয়ার-রোগে ('ডিমেনসিয়া’) ভুগছে। 'ডিমেনসিয়া' একটি অসুখ। এর অর্থ হলো 'স্মৃতিভ্রম' বা ভুলে-যাওয়ার-রোগ। খাজা আসিফও স্মৃতিবিভ্রমজনিত ভারসাম্যহীন উল্টোপাল্টা কথাই বলছেন। কিন্তু আপনারা তো সবাই জানেন, ২০১৬ সালে যখন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো না তখন কিন্তু তারা দোষ দিয়েছিলেন ভারতের। সেটা কিন্তু একদম কাগজে-কলমে-রেকর্ডে-বিবৃতিতে রয়েছে।

তখন তারা ভারতকে দোষ দিলেন। আর এখন তারা হঠাৎ করেই দোষ দিচ্ছেন বাংলাদেশকে। এটা কি হাস্যকর ও অযৌক্তিক নয়? সার্কভুক্ত আটটি রাষ্ট্রের মধ্যে নেপাল সার্কের সভাপতি। বাংলাদেশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে না, এমন কথা জানানোর আগেই কিন্তু ভারত, ভুটান, আফগানিস্তান সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিল। ৩০ সেপ্টেম্বর সম্মেলন প্রত্যাখ্যান করে শ্রীলংকা। মালদ্বীপ তারও পরে ১ অক্টোবর সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়।

এখন আসা যাক, কেন তারা সম্মেলন বর্জন করেছিল। ভারত বলছে, পাকিস্তানের সাথে তাদের 'কাশ্মীর' ইস্যু নিয়ে সমস্যা আছে। অন্য রাষ্ট্রগুলো বলল, পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তারা সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়। তাদের ওখানে সার্ক সম্মেলনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ এখানে দু'টি ইস্যুর কথা বলছে। এক. যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে পাকিস্তান তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছে। দুই. পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র।

কিন্তু এসব অভিযোগকে এড়িয়ে গিয়ে তারা (পাকিস্তানিরা) যখন বলে,  বাংলাদেশের কারণে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়নি, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রটির স্মৃতিবিভ্রম ঘটেছে। আসলেই পাকিস্তান হচ্ছে একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় তারা বলল, তারা এ বিচার সমর্থন করে না। তারা এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। তার মানে তারা গণহত্যাকে সমর্থন করে। কারণ তারা নিজেরাই একটি গণহত্যাকারী রাষ্ট্র।

প্রশ্নঃ পাকিস্তান বলছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করেছে। এ কথার সাথে আপনি কতটুকু একমত?

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজঃ পাকিস্তান একথাও প্রমাণ করেছে যে, তারা ডিমেনসিয়ার (স্মৃতিবিভ্রম) রোগী। কারণ, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি কোনোভাবেই আমাদের উপর বাধ্যতামূলক নয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ-- এ ধরনের কোনো অপরাধ কোনোভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়। এসব অপরাধে কেউ কাউকে ক্ষমা করতে পারে না।

এসব অপরাধে কেউ যদি কাউকে মাফ করে তাহলে ভিয়েনা কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ১৫৩ অনুযায়ী চুক্তিটি বাতিল হয়ে যায়। এই চুক্তি অনুযায়ী ত্রিপক্ষীয় চুক্তিটি একটি বাতিল চুক্তি। এই চুক্তির কোনো কার্যকারিতা আন্তর্জাতিক আইনেও নেই, আমাদের দেশীয় আইনেও নেই। তার প্রমাণ হচ্ছে, আমার দেশের আইনে কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি তখনই বাধ্যতামূলক হবে, যখন সেটি সংবিধানের ১৪৫(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আমার দেশের সংসদে পাস হবে। কিন্তু কখনো এই চুক্তি আমাদের সংসদে উথাপিতই হয়নি।  

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বলছি পাকিস্তানের স্মৃতিভ্রম ঘটেছে? কারণ হচ্ছে, তারা বলছে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীসহ আজকে আমাদের এখানে যাদের বিচার হচ্ছে তাদের বিচার আমরা করবো না মর্মে একটি ওয়াদা নাকি আমরা করেছিলাম। পাকিস্তানের স্মৃতির এমন দেউলিয়াত্ব দেখা দিয়েছে যে, আমরা তা দেখে অবাক হচ্ছি। তা ভুলে গেছে, বাংলাদেশের আল বদর-আল শামস-রাজাকারদের নিয়ে একটাও লাইন কিন্তু ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে নেই। যদি তারা মনে করে ঐ চুক্তির দোহাই দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের সমালোচনা করবে, তাহলে তাদের বক্তব্য অনুযায়ী রাজাকার-আলবদর- আল শামসরা তাদের দেশেরই নাগরিক। তার মানে পাকিস্তানি নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছে এরা যুদ্ধাপরাধী।  
এক্ষেত্রে তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন, ‘তাহলে এদের বিচার কি তোমরা(পাকিস্তানিরা) চাও না?’

এখন এটি তো শুধু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের ইস্যু না। বরং এটি পুরো মানবজাতির বিষয়। যে কোনো সভ্য রাষ্ট্র অপরাধীর বিচার চাইবে, এটাই তো স্বাভাবিক।

 প্রশ্ন: পাকিস্তানের ব্যপারে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত কী হওয়া উচিত?
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজঃ পাকিস্তান দিনে দিনে একটি অসভ্য রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তারা কোনো আইন মানছে না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা সম্প্রীতির প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। শুধু বাংলাদেশ নয়, সার্কের সকল সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রেরই উচিত পাকিস্তানের সঙ্গে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করা। সার্কের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে বলা আছে, " বন্ধুত্ব, আস্থা ও পারস্পরিক সমঝোতাই হবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর সম্পর্কের ভিত্তি। ’’ 

সার্কের আওতাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কেবল পাকিস্তানেরই কোনো বন্ধু নেই। বাংলাদেশ না হয় অংশগ্রহণ করেনি, অন্যরা তো করতে পারতো! কিন্তু অন্য কোনো সদস্য রাষ্ট্রও তো অংশগ্রহণ করেনি।

 বাংলানিউজ: আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজঃ আপনাকে এবং বাংলানিউজকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৮
এসএম / জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।