রাজধানীর বারিধারা এলাকায় রাস্তার ধারে পিঠা বানিয়ে বিক্রি করেন মীনা (২৩) ও তার মা আসমা খাতুন (৪৫)।
সেদিন বিকেলে পানি দিয়ে কড়াই পরিষ্কারের পালা চলছিলো।
ধীরে ধীরে কিছুটা আগ বাড়িয়ে দেখা মিললো নূরবানুর (৩১)। তিনি ত্রিশ বছর ধরে পিঠা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। তার হাতের চিতই পিঠা, ডিম-চিতই ও তেলের পিঠা খুব জনপ্রিয়। ভাপা পিঠা কেন বিক্রি করেন না, জিজ্ঞেস করাতে হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ছেলে বাবুলকে (১৮)। সে নাকি ভাপা পিঠা বানাতে সিদ্ধহস্ত। দারুণ ভাপা পিঠা বানিয়ে ইতোমধ্যে নিজস্ব ক্রেতাসমাজ তৈরি করে নিয়েছে সে। তবে পিঠা বানানো ও বিক্রি করা তার কাছে একটি মৌসুমী পেশা। বছরের অন্যান্য সময়ে সে দর্জির কাজ করে মতিঝিলে। এভাবেই সে ৫ সদস্যের পরিবার পরিচালনা করে।
এবার কথা হলো বয়োজ্যেষ্ঠ কমলা বানুর (৫৫) সঙ্গে। রাজধানীর বসুন্ধরা গেটে বসে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। বেশ আক্ষেপের সুরেই অনেকগুলো কথা বললেন। স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ে তার। ছেলে বেকার ঘুরে বেড়ায়। সংসারে কোনো সাহায্য করে না। সেজন্য এ বয়সে রাস্তার পাশে বসে পিঠা বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে। তবে এতোটা দুর্দশার পরেও তার পিঠার ক্রেতা অনেক বেশি। ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, ও সুস্বাদু তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চাল কিনে নিজের হাতে মিল থেকে ভাঙ্গিয়ে নিয়ে আসেন। গুড় আনেন টঙ্গি থেকে। সারা সন্ধ্যা পিঠা বিক্রির পর প্রতিদিন ১০০০-১২০০ টাকা হাতে থাকে তার।
সবশেষে কথা হলো আয়েশা খাতুনের (৪৮) সঙ্গে। তিনি ও তার স্বামী আবদুর রহিম (৫৫) মিলেমিশে পিঠা বিক্রি করেন রাজধানীর নর্দা এলাকায়। আয়েশা পিঠা বিক্রি করেন এবং তার স্বামী সেগুলো ক্রেতাদের কাছে বুঝিয়ে দেন। প্রথমে তারা কথা বলতেই চাচ্ছিলেন না। সাংবাদিক ও পুলিশের উপর তাদের বেজায় রাগ। চল্লিশ বছরের ব্যবসায় অনেকবার এ পিঠা বিক্রেতা যুগলকে রাস্তার পার থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও অনেক সময় নিয়ে গল্প করলেন। পাঁচ টাকা কেজি যখন চাল ছিলো, তখন থেকে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। ক্রেতা নাকি দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র কর্মজীবী নারী-পুরুষ নয়, বিলাসবহুল গাড়ি থেকে নেমেও আয়েশা খাতুনের পিঠা কিনে নিয়ে যান অনেকে। শেষমেষ অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন তিনি, ‘যত বড় বড় দোকান তৈয়ার হোক না ক্যান, আমার খাঁটি মাল দিয়ে বানানি পিঠার কাস্টোমার বাড়বো বই কমবো না’।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
আরএ