‘১৫ দিন পেরিয়ে সময় ৯ মাসে গড়িয়েছে। ১৫ দিন কি এখনো হয়নি? মালিকদের কাছে কি আসলে সরকার আত্মসমর্পণ করলো?’ এই প্রশ্ন রাজধানীর বাসিন্দা মো. বশিরের।
বশির বলেন, ‘রাজধানীতে গণপরিবহনের ভোগান্তি নতুন কিছু নয়। প্রতিবছরই সরকার ও বিআরটিএ’র উদাসীনতায় নগরবাসীকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধে সরকার উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু সিদ্ধান্ত স্থগিত করে এতোদিন পরও তার সুরাহা না করায় আমরা হতাশ। বরাবরের মতো তাই পরিবহনগুলোর ‘সিটিং সার্ভিস’র নামে ‘চিটিং সার্ভিসে’ অতিষ্ঠ যাত্রীরা। ’
ঢাকার কয়েকটি পরিবহনের চালক-হেলপার ও যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে আন্দাজ করা যায় সিটিং সার্ভিসের নামে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অনৈতিক প্রতিযোগিতা। যে পথটুকুতে ১০ টাকার ভাড়াও নেওয়ার কথা নয়, সে পথটুকুতেই ‘সিটিং সার্ভিস’ বলে নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। এমনকি ৫০ টাকা নিলেও ‘সিটিং সার্ভিসের’ লেশমাত্র থাকে না। সিট চাপা, জানালার কাঁচ ভাঙা, সিট ভর্তি হয়ে যাওয়ার পরও যাত্রী ওঠানো, স্টপেজের বাইরে যত্রতত্র থেমে যাত্রী ওঠানো ইত্যাদি অনিয়ম স্বাভাবিক ঘটনা। এর ওপর আবার কোনো যাত্রী প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে অপমান করাসহ বাস থেকেও নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন চালক-হেলপাররা।
সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে পল্টন মোড় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভার পর্যন্ত ভাড়া ৩০ টাকা। কিন্তু পল্টন থেকে কোনো যাত্রী যদি সুপ্রভাত বাসে করে রামপুরা, বাড্ডা বা নতুন বাজার যায় তাদেরও সেই ৩০ টাকাই ভাড়া দিতে হয়। এর মধ্যে মাঝপথে কোনো যাত্রী নেমে গেলে নতুন যাত্রী উঠিয়ে তার কাছ থেকেও একই অর্থ আদায় করা হয়।
পল্টন থেকে কুড়িল পর্যন্ত যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই ভাড়া এই রোডের দূরের-কাছের সবগুলো স্টপেজের জন্যই প্রযোজ্য বলে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন পরিবহনটির হেলপার-চালকরা। অর্থাৎ বাসে উঠলেই নির্দিষ্ট ভাড়া দিতে হবে, তাদের কাছে গন্তব্যের দূরত্ব কোনো বিষয় নয়।
কেবল সুপ্রভাতই পরিবহনই নয়, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করা প্রায় প্রতিটি সিটিং সার্ভিসই এভাবে ‘চিটিং’ করে যাত্রীদের পকেট কাটছে।
কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইদানীং রাজধানীতে অফিস-আদালত ছুটি হওয়ার পর সব লোকাল বাস ‘সিটিং সার্ভিস’ হয়ে যায়। ফলে তীব্র পরিবহন সংকট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নারী-বয়স্কসহ যাত্রীসাধারণকে।
কয়েকজন যাত্রী এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এতো অন্যায়-অনিয়ম হচ্ছে এ শহরের পরিবহন সেক্টরে, কিন্তু কেউ কিছু বলছে না। মালিকরা চালাকি করে সব বাসকে ‘সিটিং সার্ভিস’ বানিয়ে ফেলছে। পরিবহন মালিক নামধারী মাস্তানদের কাছে সরকারের অসহায়ত্ব নাগরিক সেবারই দুর্দশার বহিঃপ্রকাশ। ’
ফার্মগেটের খামারবাড়ি মোড় থেকে বিকাশ পরিবহনে চড়ে বনানী যাচ্ছিলেন মো. রবিউল আলম। তার কাছে বাড়তি ভাড়া চাওয়া হলে তিনি প্রতিবাদ করে বলেন, ‘এই শহরে দ্রুত সিটিং সার্ভিস বন্ধ হওয়া উচিৎ। ’ তার এই কথা শুনে বাসটির হেলপার দাম্ভিকতার স্বরে বলেন, ‘কোনো লাভ নাই, কেউ সিটিং বন্ধ করতে পারবো না। ’
একই বাসের যাত্রী সিহাব বলেন, ‘সরকার সিটিং বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েও তাতে অটুট থাকতে না পারায় পরিবহন মালিকদের সাহস বেড়ে গেছে। এখন তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। কারণ, তারা ভাবছে তাদের আটকানোর কেউ নেই, যেখানে সরকার তাদের কাছে পরাজিত!’
বিকাশ পরিবহনের বাসটির চালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা বললে তারা দাবি করেন, তারা মালিকের চাকরি করেন। মালিকদের নিয়ম না মানলে তাদের চাকরি চলে যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সরকার মালিকদের স্বার্থ সবসময় দেখে আসার কারণে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঢাকায় পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য এখন লাগামছাড়া।
এ বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এমএসি/এইচএ