ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

১৮শ’ টাকার গলদা এখন ৭শ’ টাকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
১৮শ’ টাকার গলদা এখন ৭শ’ টাকা! মাছের বাজারে গলদা চিংড়ি। ছবি- বাংলানিউজ

খুলনা: ‘গলদার অব্যাহত দরপতনে আমাগো মতো চাষিরা পথে বসেছে। লাভ তো দূরের কথা আসল টাহাও উঠবে না। এক বছর আগেও ২শ’ গ্রাম ওজনের (৫ গ্রেডের) গলদা চিংড়ির কেজি ছিলো ১৮শ’ টাহা। এহন সেই মাছ বেস্তি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৭শ’ টাহায়।’ 

সোমবার (২২ জানুয়ারি) বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার সোনাইলতলা গ্রামের গলদা চিংড়ি চাষি শেখ মো. ওলিউল্লাহ এসব কথা বলেন।

তিনি জানান, ৪৫ বিঘা জমিতে গলদা চাষ করেছিলেন।

লাখ লাখ টাকা খরচ করে আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির দাম ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মাঝারি ও ছোট আকারের গলদার দাম এখন সাদা মাছের চেয়েও কম। ৩/৪ শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে এবার অনেকে নতুন করে গলদা চাষ না করে বাগদা চাষে ঝুঁকছেন।

রূপসা উপজেলার টিএস স্বল্প বাহিরদিয়া গ্রামের গলদা চাষি মনির উদ্দিন বলেন, গলদা চিংড়ির দাম অনেক কম। চিংড়ি চাষে এক সময় সুদিন ফিরেছিল। এখন সেই চিংড়িই পথে বসাচ্ছে।

তিনি জানান, বেশি দামে খাবার কিনে উৎপাদনের পর কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এছাড়া এলাকায় ব্যাপক মাছ চুরি হওয়ায় অনেকে মাছের ঘের ফেলে রেখেছেন। নতুন করে আর গলদা চাষ করছেন না।  

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা গ্রামের আবদুল্লাহ বলেন, দিন দিন গলদা চিংড়ি চাষের খরচ বাড়ছে, অথচ বাজারে চিংড়ির দাম নেই বললেই চলে। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

মহানগরীর কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য বাজারের মুজাহিদ ফিশের আড়ৎদার আবু মুসা বাংলানিউজকে জানান, প্রতি পিস ২০০ গ্রামের উপরে ৫ গ্রেডের গলদা চিংড়ির দাম ৭৫০ টাকা, প্রতি পিস ১৫০ গ্রামের উপরে ৮ গ্রেডের ৬০০ টাকা, প্রতি পিস ১০০ গ্রামের উপরে ১০ গ্রেডের ৫৫০ টাকা, প্রতি পিস ৮০ গ্রামের উপরে ১২ গ্রেডের ৪৮০ টাকা। এক বছর আগে এসব গ্রেডের মাছের দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ ছিলো।

মাছের বাজারে গলদা চিংড়ি।  ছবি- বাংলানিউজতিনি আরও জানান, এখন গলদার শেষ সিজন চলছে। অনেকে ভেবেছিলেন শেষে এসে দাম বাড়বে। এই ভেবে মাছ রেখে দিয়েছিলেন। এখন তারা বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম না থাকায় খুলনাঞ্চলের খোলা বাজারে সাধারণ মাছের মতো গলদা বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছে যারা চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ করে। এদের কারণেও বিশ্ব বাজারে চিংড়ির চাহিদা অনেকটা কমেছে।

মৎস্য অফিস ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও যশোর জেলায় ১০ লক্ষাধিক ছোট-বড় গলদা চিংড়ির ঘের আছে। এ দেশের গলদা চিংড়ির সবচেয়ে বড় বাজার ছিল ব্রিটেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে। এর ফলে তারা একদমই গলদা চিংড়ি কিনছে না। যে মাছের দাম গত বছর ১২ ডলার ছিলো সেটির দাম এ বছর ৮ ডলার। যে কারণে চাষিরা স্থানীয় বাজারে কম দামে গলদা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। খুলনাঞ্চলের ৬০টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সরকারও হারাচ্ছে বিশাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামীম হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে গলদার চাহিদা না থাকায় খুলনাঞ্চলের খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে রফতানিযোগ্য গলদা চিংড়ি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চিংড়ি চাষিরা। চাষের খরচ না উঠায় তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।

তিনি জানান, ব্রিটেনের বাজারে গলদা চিংড়ির চাহিদা সবচেয়ে বেশি ছিলো। সেটা একদমই কমে গেছে। চাষি ও রফতানিকারকদের কথা মাথায় রেখে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বাজার সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এমআরএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।