সম্পূর্ণ আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানটির ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ গত ১৪ বছর ধরে রয়েছে শূন্য। জনবল সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পরেও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রামীণ জনপদের পিছিয়ে পড়া নারীদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ২০০০ সালে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের তুলাতলায় প্রতিষ্ঠিত হয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। যা খুলনা বিভাগের একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে কৃষি, পশু পালন, পল্ট্রি ও মৎস্য চাষ ট্রেড নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ৫ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালের জুলাইতে মৌ চাষ বিষয়ে সাতক্ষীরার ২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন করে ২০১১ সাল থেকে কম্পিউটার, বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলরিং প্রশিক্ষণ শুরু হয়, যা এখনও চলছে। শুরুর চারটি ট্রেড ও মৌচাষ কোনটিই এখন চালু নেই। এসব ট্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা স্বত্ত্বেও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নেই। বর্তমানে যে ৪টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ চালু আছে সেগুলোতেও প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নেই। ল্যাবে কম্পিউটার, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বিদ্যুতের সমস্যায় সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না প্রশিক্ষণার্থীরা।
কম্পিউটার প্রশিক্ষাণার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে কম্পিউটার শিখতে এসেছি। এখানে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য আছে মাত্র ৬টি কম্পিউটার। এরমধ্যে দু-একটি কম্পিউটার প্রায়ই নষ্ট থাকে। যার কারণে আমাদের প্রশিক্ষণ ব্যাহত হয়।
মোরশেদা আক্তার বলেন, আমাদের প্রশিক্ষণের সময় তিন মাস। একটা কম্পিউটারে চারজন বসি। কম্পিউটারে কাজের সময় প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। সকালে গেলে বিকেলে বিদ্যুৎ আসে। আমাদের জন্য সৌরবিদ্যুৎ বা জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হলে আমরা ভালভাবে শিখতে পারতাম।
জোসনা আক্তার, আসমা আক্তার, আফরোজা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, হোস্টেলে খুবই নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হয়। স্থায়ী কোনো বাবুর্চি নেই। অস্থায়ীভাবে নিয়োগে যিনি আছেন তাকে রান্নার কাজে প্রশিক্ষাণার্থীদেরই সহযোগিতা করতে হয়। যে কারণে প্রশিক্ষণের ক্ষতি হয়। এছাড়া খাবার পানির জন্য একটি পুকুর আছে, যা শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়। খাবার পানির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
কম্পিউটার প্রশিক্ষক মো. আছাদুজ্জামান বলেন, যথেষ্ট আন্তরিকভাবে প্রশিক্ষণ দেই। তবে আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। প্রশিক্ষক পদে ৫ জন, হোস্টেল সুপার একজন, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একজন, বাবুর্চি একজন, অফিস সহাকারী তিনজন, নৈশপ্রহরী দুইজন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী একজনের পদ শুন্য রয়েছে। এতে প্রায়ই সমস্যায় পড়তে হয়।
সহকারী পরিচালক প্রশিক্ষণ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মোখলেচুর রহমান বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রশিক্ষাণার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে পারছি না। প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় যে উপকরণ ছিল এখনও সেই উপকরণে চলছে। এখন পর্যন্ত নতুন কোনো প্রশিক্ষণ উপকরণ পাইনি। প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ গত ১৪ বছর ধরে শূন্য।
এসব সমস্যার মধ্যেও এখান থেকে ১ হাজার ৫শ’ ৭৪ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে নিজে প্রতিষ্ঠান করে কাজ করছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাবো। সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৮
আরআর