বিদ্যালয়ে যাওয়া আসার রাস্তায় লোহার পেরেক দিয়ে বেড়া দেওয়ায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। ছিঁড়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের জামা কাপড় ও স্কুলব্যাগ।
দেড় বছর আগেও রাস্তাটি অনেক প্রশস্ত ছিল। মোস্তাফিজার নামে এক ব্যক্তি নিজের জমি দাবি করে শিক্ষার্থীদের চলাচলের রাস্তায় বেড়া দেওয়ায় রাস্তাটি সরু হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষার্থীদের যাওয়া আসার সময় বেড়ায় থাকা পেরেকে আটকে জামা-কাপড় ও ব্যাগ ছিঁড়ে যাচ্ছে।
অনেকে পেরেকের আঘাতে আহতও হচ্ছেন। শুধু তাই নয় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য রাস্তায় ফেলে রাখা হচ্ছে গরুর গোবর ও ময়লা আবর্জনা। এতে দুর্গন্ধ সৃষ্টির পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এমতাবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ এ পথে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ।
ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মোস্তাফিজার রহমানের বাবার কাছ থেকে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় রাস্তাটি কেনা হয়েছিল। কিছুদিন পরেই মোস্তাফিজার রহমানের বাবা মারা যান। ফলে জমি রেজিস্ট্রি সম্ভব হয়নি।
২০১৬ সালের শেষের দিকে মোস্তাফিজার তা অস্বীকার করে বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তায় বেড়া দেন, ফলে রাস্তাটি সংকোচিত হয়ে যায়। এ নিয়ে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে বিষয়টি সমঝোতা হয়। সেসময় মোস্তাফিজার রহমান রাস্তা থেকে বেড়া সরিয়ে নেবেন মর্মে কাগজে স্বাক্ষরও করেন। কিন্তু কয়েকমাস পরেই পেশি শক্তির বলে আবারও বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন এবং শিক্ষকদের হুমকিও দেন।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লতা আক্তার বলেন, রাস্তাটি অনেক সরু, একাই যাওয়া কষ্টকর তার মধ্যে বেড়ার পেরেক বাইরে বের হয়ে থাকায় ধাক্কাধাক্কি লাগলে পেরেক গায়ে ঢুকে আহত হতে হয়। আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে আছি।
দশম শ্রেণির ছাত্রী জোনাকি আক্তার বলে, বেড়ার পেরেকে আটকে আমাদের স্কুল ব্যাগসহ জামা কাপড় ছিঁড়ে যায়। অনেক সাবধানে চলতে হয়, তবুও লোহার পেরেক শরীরে লাগে। আমরা শিগগির এর প্রতিকার চাই।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মায়া আক্তার বলে, রাস্তাটি সরু হওয়ায় বর্ষার সময় কাদা জমে যায়। এসময় যাওয়া-আসায় খুবই সমস্যা হয়। শুধু তাই নয়, রাস্তায় ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখায় দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে যাওয়া আসা করি।
রহমতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র বর্মন বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবধি সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিগত কয়েক বছরে জেলায় শতভাগ পাশের তালিকায় আমাদের বিদ্যালয়ও একটি। বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তার সমস্যাটি ইতোপূর্বে তৎকালীন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মিলে কয়েকবার সমাধান করলেও কাঙ্খিত কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। একদিকে যেমন ছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে অন্যদিকে আমরা শিক্ষকরাও সাইকেল কিংবা মোটরসাইকেল নিয়ে চলতে গেলেও খুব সাবধানে চলতে হয়। বর্তমানে প্রভাবশালী মহলের বাধার মুখে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি। কোনোভাবেই রাস্তা থেকে বেড়া সড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে মোস্তাফিজার রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এখন সময় নেই বলে ফোন কেটে দেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলিয়া ফেরদৌস জাহান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমার জানা ছিল না, এইমাত্র শুনলাম। সরেজমিনে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ অচিরেই এ বেড়া সরিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশের রাস্তাটি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
আরএ