বেশিরভাগ অপরাধের ‘আঁতুড়ঘর’ এই মাদকের ব্যাপকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা খুবই নগন্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কম সংখ্যক পুনর্বাসন কেন্দ্র, সাধারণ হাসপাতালে মাদকাসক্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকা, অভিজ্ঞ ডাক্তার ও নার্সের অভাব এবং সচেতনতার অভাবে সমাজের মাদকাসক্তরা থেকে যাচ্ছে চিকিৎসার বাইরে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সবশেষ হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। তারা ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, কোকেন, গাঁজা, বিভিন্ন ধরনের মদ, প্যাথেড্রিন, বুপ্রেনরফিন, মরফিন, রিকোডেক্সসহ অন্তত ত্রিশটির বেশি মাদকে আসক্ত।
এদের মধ্যে গত ১০ বছরে মাত্র ৬০ হাজার ২৩২ জনকে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। যা মোট মাদকাসক্ত রোগীর মাত্র শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ।
জানা যায়, সরকারিভাবে চারটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রটিকে গত ১৮ জানুয়ারি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার নিরাময় কেন্দ্রের প্রত্যেকটিতে ৫টি করে সর্বমোট ১৫টি শয্যা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের পরও সরকারিভাবে পরিচালিত নিরাময় কেন্দ্রের মোট শয্যা সংখ্যা মাত্র ১১৫টি।
২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নিরাময় কেন্দ্রে ১৫ হাজার ৭০৪ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাকি তিনটি বিভাগীয় শহরের সরকারি নিরাময় কেন্দ্রে ১ হাজার ১৭৫ জন এবং দেশজুড়ে বেসরকারি ১৯৭টি নিরাময় কেন্দ্রে ৪৩ হাজার ৩৫৩ জন চিকিৎসা দেওয়া নিয়েছেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানান, ২৭টি জেলায় এখনো কোনো নিরাময় কেন্দ্র নেই। মাদকাসক্তের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা আরো জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার ৫শ শয্যা অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি।
তবে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে মাদকাসক্তদের চিকিৎসায় একটি ওয়ার্ড বরাদ্দ দিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যেসব মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে সেখানেও পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্সের অভাব। সেসব বিষয়গুলো সমাধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে।
কুমিল্লা, যশোর ও রাজশাহী জেলা কারাগার হাসপাতালগুলোতে মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সব জেলা কারাগার হাসপাতালে মাদকাসক্ত রোগীদের চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আঞ্চলিক পর্যায়ের নিরাময় কেন্দ্রগুলোকে ২৫ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহরগুলোতে ৫০ শয্যার নিরাময় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পরিল্পনা অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।
সরকারি পর্যায়ে নিরাময় কেন্দ্রের অবকাঠামো তৈরি করে পরিচালনার জন্য বেসরকারি পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি এক্ষেত্রে বেসরকারি উদ্যোক্তরা এগিয়ে আসবেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলেও আমরা একটা মাত্রায় নিয়ে আসতে পেরেছি। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থাগুলো কাজ করছে।
বেসরকারি পর্যায়ে মাদকাসক্তির চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারিত করতে বেসরকারি মাদকাসক্ত পরামর্শ কেন্দ্র, নিরাময় কেন্দ্র ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
পিএম/এএ