প্রতিদিনই ব্রিজটিতে কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে, অন্যদিকে সকাল থেকে রাত অবধি লেগে থাকে যানজট। শুধু ব্রিজটিতে চলাচলকারীরাই নন, ভোগান্তিতে পড়ছেন আশপাশের এলাকার বাসিন্দারাও।
ব্রিজটি রাজধানীর নয়াবাজার থেকে শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বুড়িগঙ্গার ওপার কদমতলিতে। এতে লেগে থাকা যানজট নিমেষেই ছড়িয়ে পড়ে দুই পাড়ের এলাকায়। ফলে এলাকা দুটির বাসিন্দাদের পড়তে সীমাহীন ভোগান্তিতে।
সম্প্রতি বাবুবাজার ব্রিজ ও এর আশপাশের এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিজের উপরে অবৈধভাবে স্থাপিত হয়েছে দুটি গাড়ির স্ট্যান্ড। যেখানে এক/দুইশো অটোরিকশা ও লেগুনা দাঁড়িয়ে রয়েছে। ব্রিজটিতে যাতায়াতকারী সব গণপরিবহন স্ট্যান্ড দুটিতে যাত্রী ওঠা-নামা করাচ্ছে।
ব্রিজটির উপরে গাড়ির স্ট্যান্ডে যাত্রীদের আসতে পাশে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দুটি লোহার ব্রিজ। লোহার ব্রিজে চড়ে যাত্রীরা বাবুবাজার ব্রিজের উপরে উঠে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। ব্রিজের উপরে যাত্রীদের লম্বা লাইনের জন্য যানজটের ভোগান্তি আরও যায় বেড়ে। ব্রিজের উপর স্ট্যান্ডে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করানোর কারণে পিছনে থাকা গাড়ি সামনের দিকে এগোতে পারে না। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই ব্রিজের দুই পাশে লেগে যায় বিশাল যানজট। এই যানজট মিনিটের মধ্যেই ব্রিজ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও অটোরিকশা চালকরা বাবুবাজার ব্রিজ ও এর আশপাশের এলাকার যানজটের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ সদস্যদের দায়ী করেন। অটোকিশা, লেগুনা ও বাস চালকদের কাছ থেকে মাসিক হারে তারা টাকা নিয়ে এই অবৈধ স্ট্যান্ড চালান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীতে ঢাকা মেট্রো: থ সিরিয়ালের অটোরিকশা ছাড়া অন্য জেলা কিংবা সিরিয়ালের অটোরিকশা এই ব্রিজে চলাচল নিষিদ্ধ। তারপরও ব্রিজটি দিয়ে পুলিশ ও নেতারা টাকা খেয়ে প্রতিদিন এক হাজারের মতো অবৈধ ও চোরাই অটোরিকশা চলাচল করতে দেন।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত এক বছরের বেশি সময় ধরে যানজট লাগবে বলে ব্রিজে টোল নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু নেতা ও পুলিশ সদস্যরা টাকা খেয়ে অবৈধ স্ট্যান্ড বানিয়ে যানজটে ভোগাচ্ছেন মানুষজনকে।
নয়াবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, নয়াবাজার ও বাবুবাজারে যানজট লাগার অন্যতম কারণ হলো- ব্রিজের উপর অবৈধ দুটি গাড়ির স্ট্যান্ড। ব্রিজের উপর অন্য কোথাও গাড়ির স্ট্যান্ড আছে কিনা আমার জানা নেই।
মাওয়া ঘাটগামী বাসচালক কালু খান বাংলানিউজকে বলেন, আমারা তো ব্রিজ থেকে নেমেই যাত্রী ওঠানামা করাতে চাই, কিন্তু ব্রিজের নিচে যাত্রী ওঠা-নামা করালে পুলিশ আমাদের ধরে। ব্রিজের উপর অটোরিকশা ও লেগুনা স্ট্যান্ড থাকায় আমাদের গাড়ি চালাতেও আমাদের অনেক অসুবিধা হয়।
এ বিষয়ে অটোরিকশা ও লেগুনা চালকরা জানান, নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা দিয়ে তারা এখানে গাড়ি নিয়ে আসেন। ব্রিজের নিচে যাত্রী ওঠা-নামা করতে দেয় না পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা। তারাই এখানে গাড়ির স্ট্যান্ড বানিয়ে দিয়েছেন। চালকরা তাই ব্রিজের উপরেই যাত্রী ওঠানামা করান।
বাবুবাজার ও নয়াবাজার এলাকায় যানজটের আরেক কারণ- ব্রিজের নিচের এলাকায় রাস্তায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ট্রাক ও ভ্যান স্ট্যান্ড। ব্রিজের পাশ দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন রাস্তা দখলের জন্য চলাচল করতে পারে না। ফলে এলাকা দুটিতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
এমএসি/এমজেএফ