ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কান্তজিউ মন্দিরের টেরাকোটায় পুরাণ-ইতিহাসের রূপালেখ্য

মাহিদুল ইসলাম রিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৮
কান্তজিউ মন্দিরের টেরাকোটায় পুরাণ-ইতিহাসের রূপালেখ্য পোড়ামাটির অলঙ্করণে মন্দিরের দেয়ালের গয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। ছবি: বাংলানিউজ

দিনাজপুর: দিনাজপুর জেলাশহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর কোল ঘেঁষে ছায়ানীরব এক পল্লীতে কান্তজিউ মন্দির। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী কান্তজিউ মন্দির। বাংলার স্থাপত্যসমূহের মধ্যে বিখ্যাত এ মন্দিরটির বিশিষ্টতার একটি বড়  কারণ হচ্ছে পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। প্রাচীন এই মন্দিরটির দেয়াল ঘুরে দেখলে মনে হবে যেন, চার খণ্ডে পৌরাণিক মহাকাব্যের দৃশ্যমান উপস্থাপনা। টেরাকোটায় এই সুন্দর কারুকার্য উপমহাদেশের আর নেই বলে ধারণা করা হয়।

প্রাচীনকাল থেকেই দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি উর্বর ও পলিময়। তাই এই অঞ্চলে তখন থেকেই পাথরের সংকট।

পাথরের অভাব তাই দেশিয় ধারায় পোড়ামাটি দিয়ে শিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছিলেন কান্তজিউ মন্দির নির্মাণকাজে নিয়োজিত শিল্পীরা।  

১৭২২ সালে তৎকালীন মহারাজা প্রাণনাথের তত্ত্বাবধানে কান্তজিউ মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে মহারাজা প্রাণনাথের মৃত্যু হয়। পরে মন্দির নির্মাণকাজ তার দত্তক পুত্র মহারাজ রামনাথ ১৭৫২ সালে সম্পন্ন করেন। এরই মধ্যে মন্দির নির্মান কাজে নিয়োজিত শিল্পীরা টেরাকোটা-শিল্প দিয়ে মন্দিরটির দেয়ালের গায়ে ফুটিয়ে তোলেন আদিকালের বনে পশুশিকার, রাজকীয় শোভাযাত্রা, পৌরাণিক দৃশ্যাবলী, সমুদ্রগামী জাহাজ, রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী, সম্রাট আকবরের জীবদ্দশার কাহিনী, শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন চিত্রসহ অনেক প্রাচীনকালের ঐতিহাসিক নানা দৃশ্য।  

পোড়ামাটির অলঙ্করণে মন্দিরের দেয়ালের গয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী।  ছবি: বাংলানিউজপ্রাচীন স্থাপত্যশিল্পের উজ্জ্বল নিদর্শন ঐতিহ্যবাহী কান্তজিউ মন্দির পর্যটকদের জন্য বর্তমানে একটি দর্শনীয় স্থান। বছরজুড়েই মন্দির দেখতে ভিড় করেন হাজারো পর্যটক।  

কান্তজিউ মন্দিরে বেড়াতে আসা রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ মোহোদীপুর গ্রামের মো. মাসুম হোসেন বাংলা নিউজকে বলেন, ঐতিহাসিক এই প্রাচীন মন্দিরের নাম অনেক শুনেছি। এবার নিজ চোখে দেখার সৌভাগ্য  হয়েছে। প্রাচীন মন্দিরটির দেয়ালজুড়ে পোড়া মাটির টেরাকোটা শিল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।  
বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা মাসুম আরো বলেন, কান্তজিউ মন্দির সম্পর্কে যেমনটা শুনেছি তার চেয়ে বেশি সুন্দর দেখলাম। তৎকালীন শিল্পীরা কত সুন্দর করে পোড়া মাটির টেরাকোটা শিল্পের নিদর্শন দেখিয়ে গেছেন। যা আজও মানুষের হ্নদয় কাড়ছে।  

কান্তজিউ মন্দির আসবেন কিভাবে
দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলায় অবস্থিত কান্তজিউ মন্দিরে বাস-ট্রেন ও আকাশপথে আসতে পারবেন।

পোড়ামাটির অলঙ্করণে মন্দিরের দেয়ালের গয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী।  ছবি: বাংলানিউজযদি যান বাসে চেপে 
ঢাকা থেকে সার্বক্ষণিক দিনাজপুর বা ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়গামী বাস যাতায়াত করে। ঠাকুরগাঁও বা পঞ্চগড়গামী বাসে আসলে কান্তজিউ মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে ইজিবাইক যোগে সরাসরি কান্তজিউ মন্দির যাওয়া যাবে।  

যদি যান ট্রেন চেপে
ঢাকা-দিনাজপুর রুটে দিবা-রাত্রি দুটি আন্ত:নগর ট্রেন চলাচল করে। ট্রেনে করে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন আসার পর বাস বা ইজিবাইক যোগে সরাসরি কান্তজিউ মন্দিরে যাওয়া যাবে।

যদি যান আকাশপথে
এখন নিয়মিত সকাল-বিকেল ঢাকা-সৈয়দপুর বিমান চলাচল করছে। ঢাকা থেকে সরাসরি সৈয়দপুর বিমানবন্দর নেমে বাসযোগে সরাসরি কান্তজিউ মন্দির যাওয়া যাবে।
 
থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা
কান্তজিউ মন্দির ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে খাবারের ছোট-বড় একাধিক ভালো হোটেল রয়েছে। দিনাজপুর শহরে একাধিক ভালো মানের খাবরের হোটেল রয়েছে। কান্তজিউ মন্দিরে আসা পর্যটকদের জন্য সরকারিভাবে এখানে একটি সরকারি ডাকবাংলো ও পর্যটন মোটেল রয়েছে। এখানে থাকার পাশাপাশি খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে আবাসিক হোটেল।  

নিরাপত্তা ব্যবস্থা
কান্তজিউ মন্দিরকে সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে বর্তমান সরকার পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে মন্দিরের ভেতরে পুলিশের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপিত হয়েছে। যেখানে পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকেন। এখন সেখানে স্থায়ী পুলিশক্যাম্প বসানোর কাজ চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৮
জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।