লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীর তীরে কমলনগর উপজেলার অবস্থান। বিগত বেশ কয়েক বছরের ভয়াবহ ভাঙনে এখানকার সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনাসহ বিশাল এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সরেজমিন মাতাব্বরহাট তীররক্ষা বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নির্ধারিত এক কিলোমিটার বাঁধের কাজ শেষ পর্যায়ে। যেটুকু বাঁধ রয়েছে তা ব্যতীত আশপাশের এলাকায় ভাঙন অব্যাহত। ভাঙন রয়েছে বাঁধের দুই পাশেও। সম্প্রতি ভাঙন বাঁধ অতিক্রম করেছে। এতে মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে নির্মাণাধীন বাঁধ। এমন পরিস্থিতিতে ওই এক কিলোমিটারের সঙ্গে তীররক্ষা বাঁধের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু না হলে বাঁধ প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সাইফুদ্দিন আজম বলেন, মূল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজালে (ডিপিপি) ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে কমলনগরে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রায় সাড়ে ৮ কি.মি. বাঁধ নির্মাণের দিক নির্দেশনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে এখনও কাজ শুরু হয়নি। চলতি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান বাঁধের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বিশেষ বিবেচনায় কমপক্ষে সাড়ে ৪ কি.মি. বাঁধ নির্মাণ করা না হলে নির্মাণাধীন এক কি.মি. বাঁধও আগামী বর্ষায় নদীতে হারিয়ে যেতে পারে। নদীর তীররক্ষা বাঁধের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এজিএম মাসুদ রানা বলেন, নির্ধারিত এক কি.মি. বাঁধের ৯৩০ মিটার ( প্রায় ৯০) কাজ শেষ হয়েছে। গত বর্ষায় অতিবৃষ্টি ও তীব্র জোয়ারের মুখে পড়ে শতভাগ কাজ শেষ সম্ভব হয়নি। অবশিষ্টসহ আরও ৬০০ মিটার বর্ধিত করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি পেলে কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নদী তীর রক্ষায় কমলনগরের ৮ কি.মি. কাজ বাস্তবায়নের জন্য লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর উপজেলায় ২০১৪ সালে মেঘনা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এ বরাদ্দ দিয়ে রামগতির আলেকজান্ডারে সাড়ে তিন কিলোমিটার, রামগতিরহাট মাছঘাট এলাকায় এক কিলোমিটার এবং কমলনগর মাতাব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণের কথা। ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন আলেকজান্ডার এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধ সফলভাবে বাস্তবায়ন করে। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কমলনগরে বাঁধ নির্মাণের দাবি থাকলেও তা করা হয়নি। বরাদ্দ টাকায় কমলনগরে এক কিলোমিটারের কাজ নেয় নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। অর্থ বরাদ্দের দুই বছর পর প্রতিষ্ঠানটি ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকে দিয়ে কাজ শুরু করে। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়।
গত বছরের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুরের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামগতি-কমলগর নদীর তীররক্ষা বাঁধের উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের আশ্বাস দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন রোধে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
আরআর