ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্বিষহ যানজট, প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
দুর্বিষহ যানজট, প্রয়োজন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা দুর্বিষহ যানজট, ছবিটি রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার-বাংলানিউজ

ঢাকা: বরিশাল থেকে ছেলের সঙ্গে প্রথম ঢাকায় এসেছেন সোলয়মান উদ্দিন। বাবাকে ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি রাজধানীর দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করাবেন বলে পরিকল্পনা ছেলে শাকিলের। বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সদরঘাট নামেন তারা। 

স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী ছেলে লোকাল বাসেই বাবাকে নিয়ে মিরপুরে রওনা দেন। প্রায় তিন ঘণ্টা অসহনীয় জানজট অতিক্রম করে ফার্মগেটে পৌঁছান তারা।

গ্রাম থেকে ঢাকায় আসা বৃদ্ধ বাবা যানজটে বসে হাঁসফাঁস করছিলেন তখন।

বারবার জিজ্ঞেস করছিলেন, আর কতক্ষণ? ছেলে কী করবে ভেবে পাচ্ছে না! অন্যদিকে বাবার উচ্চ রক্তচাপ। বাবাকে নিয়ে ফার্মগেটে নেমে যেতে বাধ্য হলেন। পরে সিএনজিতে সোয়া এক ঘণ্টায় মিরপুরের পল্লবী পৌছান তারা। তবে শাকিল বাবাকে ডাক্তার দেখালেও দর্শনীয় স্থান ঘোরাতে পারেননি। তিনদিনের মাথায় রাজধানীর ওপর বিরক্ত বাবাকে বরিশালের বাসে তুলে দিতে বাধ্য হন তিনি।

যানজটে এমন দুর্বিষহ যন্ত্রণা রাজধানীবাসীর কাছে বেশ পুরনো। পথে সময় নষ্ট হবে এমনটা ভেবেই নগরীর রাস্তায় নামে মানুষ। তবে দিন যত যাচ্ছে ততই য‍ানজটের ভোগান্তি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়ে হাঁসফাঁস কর‍া, কর্ম শক্তি হারানো ও বিরক্ত হওয়া রাজধানীবাসীর নিয়তি যেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারণক্ষমতার বেশি জনসংখ্যা, অব্যবস্থপনা, মানুষের অসচেতনতা ও অবৈধ পরিবহনের আধিক্যই নগরীর যানজটকে দিনে দিনে ভয়ঙ্কর করে তুলছে। আর এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে পরিবহন সেক্টরে সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা ও মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে যানজট পরিস্থিতি একবারে নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
দুর্বিষহ যানজট, ছবিটি রাজধানীর বাংলামোটর এলাকার-বাংলানিউজ
ঢাকা সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনা বিভাগ জানায়, নগরীতে মোট আয়তনের ২৫ ভাগ রাস্তা থাকা প্রয়োজন। সেখানে ঢাকায় আছে মাত্র সাত থেকে আটভাগ। এই সাত আট ভাগেও পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। রাস্তার উপর বাজার, অবৈধ পার্কিংয়ে রাস্তার শতভাগ ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে পরিবহন জট।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সচিব শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, বিআরটিএ’র হিসাবে বর্তমানে ঢাকায় ১১ লাখের বেশি নিবন্ধিত মোটর যান রয়েছে। এর মধ্যে প্রাইভেট কার রয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার। ঢাকায় জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। অন্যদিকে, অবৈধ গাড়ি নিবন্ধিত গাড়ির সমান। নিবন্ধিত রিকশা রয়েছে ৮০ হাজার। এছাড়াও কয়েক লাখ অবৈধ রিকশা রয়েছে। এসব কারণে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অবৈধ গাড়ি ও পার্কিং নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে যানজট ভয়ঙ্কর থেকে আরো ভয়ঙ্করতর হবে বলে মনে করেন শওকত আলী। তিনি বলেন, ডিএমপি ট্রাফিকের এখনই সর্তক হওয়া উচিত। আমরা গাড়ির রেজিস্ট্রেশনে কিছুটা কড়াকড়ি করেছি। শুধু নিবন্ধিত গাড়ি রাস্তায় চললে যানজট তীব্র হতো না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে ধারণ ক্ষমতার থেকে বেশি মানুষ বাস করে। অবকাঠামোর তুলনায় অতিরিক্ত গাড়ি। এমনিতে রাস্তার আয়তন কম, তার উপর অবৈধ পার্কিং। এসব কারণে দিন দিন যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।

যানজট উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে ঢ‍াকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) রির্ভাইজ স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্লান (আরএসটি) হাতে নিয়েছে। ২০৩৫ সাল পর্যন্ত টার্গেট। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ঢাকার যানজট কমবে। মেট্রো রেল, বাস ট্রানজিটসহ ম্যাস ট্রান্সপোর্টেশন বৃদ্ধি করতে হবে। এতে প্রাইভেট কার ব্যবহার কমে যাবে। আরএসটি প্ল্যান বাস্তবায়নের আগে সড়ক পরিবহন ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে হবে। অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে। এতে অন্তত যানজট অসহনীয় ভোগান্তি থেকে কিছুটা মুক্তি পাব।

অবৈধ পার্কিং ও গাড়ির বিষয়ে ডিএমপি ট্রাফিক (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ডিএমপির অনেক সড়ক অবৈধ পার্কিং এবং ফুটপাত দখলদারদের হাতে রয়েছে। এ কারণে প্রধান সড়কের উপর পায়ে হাঁটা মানুষেরও চাপ পড়ে। এতে যানজট সৃষ্টি হয়।

বিআরটিএ’র অবৈধ গাড়ি ও নিবন্ধিত গাড়ি সমান- এ সংখ্যা মানতে নারাজ ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার। অবৈধ গাড়ি ও পার্কিং এর দায়ে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার মামলা দিচ্ছি। বাইরের জেলার গাড়ি ডিএমপিতে ঢুকলেও বেশিক্ষণ থাকে না। অবৈধ রিকশার সংখ্যা বেশি এটা মানছি। কিন্তু নিবন্ধিত গাড়ি আর অবৈধ গাড়ি সমান এটা মানা যায় না, যোগ করেন মফিজউদ্দিন।

যানজট কমাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নিলেও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা না আনা গেলে আগামী কয়েক বছরে ঢাকায় যানবাহনের গতিবেগ ঘণ্টায় দ‍ুই-তিন কিলোমিটারে নেমে যাবে। ফলে পরিস্থিতি কার্যত নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
এমসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।