রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোক সব সময় হতাশায় ভোগে কিছু করতে গেলে সব সময় বলে গেল গেল সব গেল।
‘৯৬ সালে সরকারে আসার পর যখন দেখলাম বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, কোনো কোনো এলাকাতে দিনের পর দিন বিদ্যুৎ থাকে না। তখন আমি দেখলাম এটা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। আমরা দেখলাম- বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। ’
আরও পড়ুন>>
** রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের আহ্বান উইদোদোর
বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকারের উদ্যোগগুলোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নত জীবন চাই। উন্নত জীবনের জন্য আমরা আইন করে বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম বলেই আজকে সরকারি-বেসরকারিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। মানুষকে আজকে তার জীবনমান উন্নয়নে সুযোগ করে দিচ্ছি।
বর্তমানে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা ও ৯০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পারলে মানুষের জীবন জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হয়। মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা যত বাড়ছে ততো অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বাড়ছে। বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদাও। ’
মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ হয়েছে ৯ মাস আগে।
প্রকল্পটির প্রাথমিক অবকাঠামোর ১৭ শতাংশ কাজ শেষে এখন প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়েছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১৪১৪ একর জমিতে নির্মিত হতে যাওয়া এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।
ভূমি উন্নয়ন, অবকাঠামো ও মাটি ভরাটের কাজ শেষ হলে ২০২১ সালে বসানো হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতি। এতে প্রথমে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে। এরপর ছয় মাসের ব্যবধানে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনবার্সনে সরকারের আন্তরিকতা ও উদ্যোগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের ফলে যারা এখনও অর্থ পায়নি বিষয়টি আমরা লক্ষ্য রাখছি। কেউ বঞ্চিত হবেন না।
বক্তব্যের শুরুতে গুলশানের হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জাপানি নাগরিকদের কথা স্মরণ করেন এবং তাদের জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।
এ ঘটনার পরও বাংলাদেশে কাজ করে যাওয়ার জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী ও জাইকাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
জাপানসহ বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তরফ থেকে নিরাপত্তা যতটুকু সম্ভব আমরা তা করে যাচ্ছি। নিরাপত্তার দিকটা খেয়াল রাখতে স্থানীয় জনগণকে অনুরোধ করবো। তারা আমাদের মেহমান, তারা আমাদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে অব্যাহত সহযোগিতার জন্য জাপান সরকার ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় গণভবন প্রান্তে জাইকার ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতসহ জাপানের একটি প্রতিনিধি দল ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান।
এ উপলক্ষে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড প্রকল্প এলাকায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহেশখালী প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনে সংযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতসহ জাপানের আরেকটি প্রতিনিধি দল, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
গণভবনে অনুষ্ঠানের শুরুতে মাতারবাড়ী প্রকল্প ও বিদ্যুতের উন্নয়নের সরকারের সফলতার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ সচিব আহমেদ কায়কাউস।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮
এমইউএম/এমএ