মঙ্গলবার (০৮ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ডিপোর প্রধান ফটক বন্ধ করে ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় শ্রমিকরা বিআরটিএ চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন।
ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে আসা প্রার্থীদেরও পরীক্ষা না দিয়েই চলে যেতে হয়। এর মধ্যে উত্তেজিত কিছু প্রার্থী ডিপোর প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
শ্রমিকেরা দাবি, ডিপোর প্রায় ৪০০ শ্রমিক গত নয় মাসের বেতন পাচ্ছেন না। এছাড়াও বদলি বাণিজ্য এবং কারণে- অকারণে জরিমানা করা হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
পুরনো শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করলেও নতুন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। বিআরটিএ-তে একটি নিয়োগ বাণিজ্য চক্র কাজ করছে বলে তাদের অভিযোগ। এসব সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। আর বেতন পরিশোধ এবং দাবি দাওয়া না মেনে নেওয়া পর্যন্ত তাদের এই ধর্মঘট চলবে বলে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়। একইসঙ্গে আজকের মধ্যে দাবি দাওয়া না মানলে কাল থেকে (বুধবার) দেশের সবক’টি ডিপোতে এই আন্দোলন ছড়িয়ে যাবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন শ্রমিকরা।
আলাউদ্দিন নামের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক চালক বাংলানিউজকে বলেন, আমার চাকরির মেয়াদ বাকি আছে আর এক মাস। কিন্তু আমি নিজেই বেতন পাচ্ছি না গত দশ মাসের। জাতীয় পে স্কেলে আমাদের বেতন হওয়ার কথা থাকলেও আমাদের বেতন হয় না। নিয়মিত বেতনের পাশাপাশি কোন ধরনের ইনক্রিমেন্ট অ্যারিয়ার বিলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও আমরা পাই না।
সোহরাব আলী নামে আরেক চালক বলেন, বিআরটিসি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান না। কিন্তু এটিকে অলাভজনক করে দেখানো হচ্ছে। বিআরটিসির নিজস্ব যে সম্পদ আছে তা দিয়েই আমাদের বেতন দেওয়া সম্ভব। আমরা প্রতিদিন বাস চালিয়ে লাভ উঠিয়ে নিয়ে এখানে দেই, কিন্তু সেই আমরাই পাই না।
মোহাম্মদ মিজান নামের অপর এক চালক বলেন, বাসা ভাড়া দিতে না পারায় আমাদেরকে বাসা ছেড়ে দিতে বলছে বাড়ি মালিকরা। বিআরটিসিতে চাকরি করে জানলে খিলক্ষেত এলাকার কোনো বাড়িওয়ালা বাসা ভাড়া দিতে চায় না। অথচ চলন্ত বাসে যদি যানজটের কারণে তেল খরচ বেশি লাগে, সেই খরচও আমাদের দিতে হয়। কর্তৃপক্ষ পুরনো গাড়ির মেরামত করে না, অথচ গাড়ির কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি হলে, ইঞ্জিন সিজ করলে, হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত আমাদের জরিমানা করা হয়। আমরা এক অমানবিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছি।
শ্রমিকদের অভিযোগ, বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানসহ এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার কারণেই তাদের বেতন বকেয়া। এছাড়াও ডিপোর ম্যানেজার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য কাজ করে তাকে বদলি করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। ডিপোর বর্তমান ম্যানেজার নুরুল আলম গত চার মাসেরই বেতন দিয়েছেন বলে জানান শ্রমিকরা। আর সে কারণে তাকে অন্যত্র বদলি করার আদেশ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
এদিকে শাখা ব্যবস্থাপক মো. নুরে আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানে দায়িত্বে আসার পর প্রতি মাসের বেতন দিয়েছি। আমার আগের ম্যানেজার সাত মাসে দুই মাসের বেতন দিয়েছেন। গত নয় মাসে চার কোটি টাকার বেতন বাকি। শ্রমিকদের বুঝতে হবে যে, এত বিশাল অঙ্কের টাকা কোন সরকারের পক্ষে এক মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব নয়।
কয়েক মাসের মধ্যে সরকার নতুন গাড়ি দিলে সেগুলো থেকে প্রাপ্ত লাভের টাকা দিয়ে দ্রুত বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলেও আশা করেন বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক আদিল হোসেন বলেন, ভেতরে ও বাইরে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস