ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিলেটে নতুন ঠিকানায় যাচ্ছেন ‘বন্দিরা’

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
সিলেটে নতুন ঠিকানায় যাচ্ছেন ‘বন্দিরা’ সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার

সিলেট: ২২৯ বছর পর নতুন ঠিকানায় যাচ্ছেন সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের বন্দিরা। উদ্বোধনের ৩ মাস পর শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) থেকে এর বন্দি স্থানান্তর শুরু হবে। চলবে শনিবার (১২ জানুয়ারি) পর্যন্ত।

এ কারণে ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি (বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার) কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ রাখার নোটিশ জারি করেছে কারা কর্তৃপক্ষ।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নাছির উল্লাহ খান বাংলানিউজকে বলেন, ওইদিন থেকে কারাগারের প্রায় আড়াই হাজার বন্দি স্থানান্তর করা হবে।

বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এরইমধ্যে জেলা প্রশাসনে সভায় সব ধরনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।  

কারা সূত্র জানায়, ১৭৮৯ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে সিলেট শহরের অভ্যন্তর ধোপাদিঘীর পাড়ে ২৪ দশমিক ৬৭ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল সিলেট জেলা কারাগার। পুরাতন কারাগারের অভ্যন্তরে ১০ একর এবং বাইরে রয়েছে প্রায় ১৫ একর ভূমি।  

১৯৯৭ সালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে রূপান্তরের পর এর ধারণক্ষমতা দাঁড়ায় ১ হাজার ২১০ জনে। বর্তমানে এই জেলে বন্দি আছেন ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ। সে হিসেবে প্রায় ২২৯ বছর পর প্রথমবারের মতো পুরনো কারাগার থেকে বন্দি সরানো হচ্ছে।

দুই হাজার বন্দির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন নবনির্মিত সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারটির উদ্বোধন হয় গত বছরের ১ নভেম্বর। ওইদিন সকাল ১০টায় সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কারাগারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অবশ্য নতুন কারাগার হলেও পুরনো কারাগারটিও ব্যবহার করা হবে বলেও জানান জেলা সুপার মো. আব্দুল জলিল।

২০১০ সালে সিলেটের নতুন কারাগার নির্মাণ ও স্থানান্তরের প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির সভায় (একনেক) পাস হয়। ২০১১ সালের আগস্টে সিলেট নগর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে সিলেট সদর উপজেলার বাদঘাটে ৩০ একর জমির উপর আধুনিক সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। নতুন কারাগার গড়ে উঠে অভ্যন্তরে ১৬ একর ও বাইরে ১৪ একর জমিতে।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারসদর উপজেলার বাদাঘাট চেঙ্গেরখাল নদী তীরে নতুন এ কারাগার নির্মাণ এবং পুরনো কারাগার এলাকায় নগরবাসীর হাঁটা-চলার জন্য পার্ক নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তবে সেখানে আর হচ্ছে না হাঁটা-চলার জন্য পার্ক। কিন্তু পুরনো কারাগারটিও ব্যবহৃত হবে বন্দি রাখার কাজে।

১৯৭ কোটি টাকা প্রক্কলন ব্যয় ধরে কারাগার নির্মাণের কাজ শুরু হলেও কাজ শেষ করতে ব্যয় দাঁড়ায় ২৭০ কোটি টাকায়। যেখানে স্থাপন করা হয়েছে ৫৯টি ভবন। কারাগারে স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ১শ’ শয্যার পাঁচতলাবিশিষ্ট চারটি হাসপাতাল, স্কুল ও লাইব্রেরি ভবন ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মকর্তাদের জন্য একশ’ ৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে।  

প্রায় ২ হাজার বন্দির ধারণক্ষমতার নতুন কারাগারে পুরুষ বন্দিদের জন্য ৬তলাবিশিষ্ট ৪টি ভবন, নারী বন্দিদের জন্য রয়েছে দ্বিতলবিশিষ্ট দু’টি ও ৪তলা একটি ভবন। নতুন কারাগারে করা হয়েছে ৪টি হাসপাতাল। রান্নার কাজের জন্য একতলাবিশিষ্ট ভবন করা রয়েছে ৫টি। স্টোর রুম বা খাবার মজুত রাখার জন্য রয়েছে ৪টি ভবন।  

কারাগারে দ্বিতলবিশিষ্ট রেস্ট হাউসও করা হয়েছে একটি। রয়েছে চারতলাবিশিষ্ট একটি ডে কেয়ার সেন্টার, মসজিদ, স্কুল ও লাইব্রেরি। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন, ক্যান্টিন, বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার কক্ষ এবং প্রশাসনিক কার্যালয় করা হয়েছে।  

জেল সুপার আব্দুল জলিল আরো জানান, কারাগারের অনুমোদিত ৪৫৫ জনবলের বিপরীতে কর্মরত আছেন ৩৯৯ জন। বাকি পদগুলো শূন্য। এই জনবলের মাধ্যমে ৩ শিফটে দায়িত্ব পালন করেন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন কারাগার চালু হওয়ার পর দুই কারাগারে এই জনবল দিয়ে দায়িত্ব পালন করাতে হবে। আর নতুনটি চালু হওয়ার পর লোকবল আরো বাড়ানোর চাহিদা দেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
এনইউ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।