সবুজের বুক চিরে আরেকটু সামনে গেলেই দেখা যায়, আরও অসাধারণ সবুজ দৃশ্য। দুই পাশে সবুজের সমারোহের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে প্রবহমান বাঁকখালী নদী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের পূর্ব রাজারকুল, নাশিকুল, খন্দকার পাড়া, সিকদার পাড়া, দক্ষিণ রাজারকুল, ফঁতেখারকুলের হাইটুপি, দ্বীপ শ্রীকুল, অফিসের চর,লম্বরীপাড়া, পূর্ব মেরংলোয়া, কাউয়ারখোপের মনিরঝিল, পূর্ব মনিরঝিল, সোনাইছড়ি, লট-উখিয়ারঘোনা, ডাকভাঙ্গা, মৈষকুম এবং গর্জনিয়া ও কচ্ছপিয়া এলাকার বাঁকখালীর নদীর চরের অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ জমিতে এ বছর শীতকালীন শাক-সবজির চাষাবাদ হয়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাঁকখালী নদীর দু’তীরের প্রায় ১৫ কিলোমিটারসহ উপজেলাটির বিভিন্নস্থানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে এবার শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঁকখালী তীরে আছে প্রায় ৪০০ হেক্টর সবজি খেত।
চাষীরা বলছেন, সবকিছুর পাশাপাশি শাক-সবজির চাহিদাও বেড়েছে। যে কারণে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আর ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষীরা।
ফুলনীরচর গ্রামের সবজি চাষী আব্দুল নবী বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর ৮০ শতক জমিতে বেগুন-মুলার চাষ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। খরচ বাদে ৫০ হাজার টাকারও বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, নদীর তীরে বছরের পর বছর পলি জমাতে এখানকার কম উর্বর জমিতেও ভালো উৎপাদন হয়। তবে পরিশ্রম অবশ্যই করতে হয়। তুলনামূলক কম সার প্রয়োগ করে সবজির ভালো উৎপাদন পাওয়ায় চাষীরা দিন দিন নদীর তীরে সবিজ চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। পূর্ব রাজারকুলের রাজু বড়ুয়া এ বছর চার কানি জমি বর্গা নিয়ে মুলা, বেগুন, হাইব্রিড মরিচ, শসা ও ক্ষীরা চাষ করেছেন। এতে তার এক লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
বাংলানিউজকে রাজু বলেন, এ বছর সবজির চাহিদা বেশি। দামও বেশ ভালো পাচ্ছে সবাই। ন্যায্য দাম পাওয়ায় চাষীরা খুব খুশি।
হাইটুপি গ্রামের রফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ৪০ শতক জমিতে ক্ষীরার চাষ করেছি। ধারণা ৫০ হাজার টাকা লাভ লাভ হবে।
সবজি চাষী নুরুল হক বলেন, এ বছর প্রায় চার কানি জমিতে বেগুন, মুলা ও মরিচের আবাদ করেছি। ভালো লাভ হবে বলে আশা করছি।
সবজি গ্রাম দ্বীপশ্রীকুল:
বাঁকখালী নদীর তীরেই ফঁতেখারকুলের দ্বীপশ্রীকুল গ্রাম। এ গ্রামে পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৪০। এর মধ্যে সবগুলো পরিবারেই সবজি চাষ এবং বেচা-কেনায় জড়িত। কেউ নিজস্ব জমিতে, কেউ বর্গা নিয়ে।
বর্গাচাষী অমূল্য বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, এ গ্রামের সব পরিবারই সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী। তাছাড়া শুধুমাত্র এ গ্রাম নয়, পাশের ফুলনীরচর, পূর্ব রাজারকুল, মনিরঝিল, সিকদারপাড়া, খন্দকার পাড়াসহ নদীর তীরের অন্তত ২০টি গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা এখন সবজি চাষ।
রামু কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কর্মকর্তা ছোটন দে বাংলানিউজকে বলেন, রামু শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। গর্জনীয়া-কচ্ছপিয়া ইউসিয়নসহ রামুতে উৎপাদিত শীতকালীন শাক-সবজি জেলার বিভিন্নস্থানে যেতো। এখন রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে উখিয়া-টেকনাফে যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ শাক-সবজি। যে কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চাষীরা দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশ ভালো পাচ্ছেন। তিনি বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর উৎপাদনও ভালো হয়েছে। বিশেষ করে বেগুন, মূলা, ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাঁকখালীর চরে সবজির হাট:
বিপুল সবজির আবাদকে কেন্দ্র করে বাঁকখালী নদীর চরে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার বসে বড় ধরনের সবজির হাট।
এ হাটের ইজারাদার নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সবজির হাটের দিন সর্বোচ্চ চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার শাক-সবজি বেচা-কেনা হয় এখানে। বেগুন, মরিচ, গোল আলু, মিষ্টি আলু, টমেটো, ফরাশ শিম, কলা, শিম, মিষ্টি কুমরা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বড়ই, ধনেপাতা, তেতুলসহ নানা রকম শাক-সবজি ও মৌসুমী ফল সবই এখানে পাওয়া যায়। এমনকি এখন ফুলের ঝাড়, শুকনো লাকড়িও মেলে এখানে। তাছাড়া বর্ষায় আম, কাঁঠাল, লেবু, জামসহ হরেক রকম বর্ষাকালীন ফলের প্রাধান্য থাকে এ হাটে।
রামু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মসাসুদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, এ বছর রামু উপজেলার ১১ ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে শাক-সবজির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাঁকখালী নদীর চরে আছে প্রায় ৪০০ হেক্টর। আলু, বেগুন, মূলা, ফরাশ শিম, ক্ষীরা, মরিচ, টমেটো, শিম, মিষ্টি কুমড়া, সরিষাসহ বিভিন্ন শাক সবজি ফলেছে এসব খেতে। তাছাড়া আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ ক ম শাহরীয়ার বাংলানিউজকে বলেন, রামু উপজেলার ১১টি ইউনিয়নসহ জেলার আটটি উপজেলায় এ বছর রবি মৌসুমে প্রায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আলু, ভুট্টা, সরিষা, ফেলন, মরিচসহ শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রামুতে দুই হাজার হেক্টর, চকরিয়ায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর, পেকুয়ায় এক হাজার হেক্টর, কক্সবাজার সদরে দুই হাজার হেক্টর, উখিয়ায় ৭৫০ হেক্টর, টেকনাফে ৬৫০ হেক্টর, মহেশখালীতে এক হাজার হেক্টর ও কুতুবদীয়ায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
টিএ