ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

আর কোনো জটিলতা নেই পদ্মাসেতুর পিলারের নকশায়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
আর কোনো জটিলতা নেই পদ্মাসেতুর পিলারের নকশায় পদ্মাসেতুর পিলার। ছবি-বাংলানিউজ

মুন্সীগঞ্জ: অবশেষে পদ্মাসেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের নকশার চূড়ান্ত অনুমোদন হয়েছে। এর ফলে সেতুর পিলার সংক্রান্ত সব জটিলতা কেটে গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এ দু’টি পিলারের নকশা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল।

ঢাকার সেতু ভবনে অনুমোদনের পর মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে নকশা চূড়ান্ত হয়ে আসে বলে এক প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন।  

এর আগে ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি সেতুর ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ নম্বর পিলারের নকশা চূড়ান্ত অনুমোদন হয় ও অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চূড়ান্ত হয় ২৯,৩০,৩১ ও ৩২ নম্বর পিলারের নকশা।

পদ্মাসেতুর ১১টি পিলারের নকশা জটিলতা কেটে যাওয়ায় দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলবে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে একই গতিতে কাজ চলবে বলে জানিয়েছেন প্রকৌশলীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের কাজ শুরুর পর ৩টি করে পাইল বসানোর পর কাজ থেমে যায়। এরপর মাওয়া প্রান্তে পিলারের কাজের গতি কিছুটা থেমে গিয়ে জাজিরা প্রান্তে কাজ শুরু হয়। এখন শুরুর দিকে বসানো ৩টি পাইল না সরিয়ে নতুন ৪টি ট্যাম্প পাইল স্থাপন করা হবে। স্ক্রিন গ্রাউটিং পদ্ধতি অবলম্বন করে এ দু’টি পিলারের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এ ট্যাম্প পাইলের দৈর্ঘ্য হবে ১০৪ মিটার।

সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মাসেতু প্রকল্পকে আরো দৃশ্যমান করতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)  ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে খরচ করতে না পারায় সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি)  বরাদ্দ কমে দাঁড়াচ্ছে ২ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। ফলে এডিপি থেকে আরএডিপি’তে পদ্মাসেতুর বরাদ্দ কমছে ১ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।

প্রকৌশল সূত্রে জানা যায়, মাটির গঠনগত বৈচিত্র্য ও গভীরতার তারতম্যের কারণে পদ্মাসেতুর মাঝনদী ও মাওয়া প্রান্তের এসব পিলার নিয়ে বেশ জটিলতায় পড়ে এ প্রকল্প। নকশা চূড়ান্ত হওয়া পিলারে স্ক্রিন গ্রাউটিং (Screen grouting) করে সমাধান মিলেছে। পিডিএ (পাইল ড্রাইভিং অ্যানালাইসিস) টেস্টে যেসব পাইল উত্তীর্ণ হতে পারে না সেগুলোর জন্য রয়েছে স্ক্রিন গ্রাউটিং এর ব্যবস্থা। হাতেগোনা বিশ্বের কয়েকটি সেতুতে এটি ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মানদীর মাটির অবস্থা ভালো না। প্রথমে এখানে বেজ গ্রাউটিং করেও ভালো ফল আসেনি। তাই নতুন করে স্ক্রিন গ্রাউটিং করা হচ্ছে। এসব পিলারের ৭টি করে পাইল ড্রাইভ করা হবে। এর আগে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখা হয়। ভালো ফলাফল আসায় একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের ক্ষেত্রে।

সূত্রটি জানায়, স্ক্রিন গ্রাউটিং এর জন্য ট্যাম্প পাইল প্রস্তুত ১৬টি। ৮, ৩১, ৩২ নম্বর পিলারের ৮টি পাইল ড্রাইভ সম্পন্ন হয়েছে, বাকিগুলোর কাজও চলছে। নদীতে যে ২৬২টি পাইল বসবে তার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১৯০টি পাইল ড্রাইভ। পদ্মাসেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ১৫টি পিলার। চলতি মাসের শেষে সেতুর ৩৬ ও ৩৭ নম্বর পিলারের ওপর ষষ্ঠ স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) ৬এফ বসানোর কথা রয়েছে। তবে নদীতে পানি কম থাকা, নাব্যতা নিরসনে বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার কাজ করছে। এ স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হবে সেতুর ৯০০ মিটার।
 
উল্লেখ্য, সেতুর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর পিলারের ওপর পাঁচটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে জাজিরা প্রান্তে পৌনে এক কিলোমিটার কাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সেতুর কাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বসানো হয় প্রথম স্প্যান। এর প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি দ্বিতীয় স্প্যানটি বসে। এর মাত্র দেড় মাস পর ১১ মার্চ শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ধূসর রঙের তৃতীয় স্প্যান বসানো হয়। এর ২ মাস পর ১৩ মে বসে চতুর্থ স্প্যান। আর পঞ্চম স্প্যানটি বসে এক মাস ১৬ দিনের মাথায়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।