সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাবির কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের কাছে স্বীকৃতির দাবি জানান।
মকবুল হোসেন বর্তমানে রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া থানার মেহেরচন্ডী এলাকায় থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে মকবুল হোসেন জানান, ১৯৬২ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় ক্যান্টিন বয় হিসেবে যোগ দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিফোন অপারেটর পদে কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আব্দুল হক, গণিত বিভাগের শিক্ষক আফতাবুল রহিম, রসায়ন বিভাগের শিক্ষক জিল্লুর রহমান ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক এনায়েতুর রহমান এবং মকবুল হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বার্তাবাহক’ হিসেবে কাজ করার পরামর্শ দেন।
মকবুলের দাবি, তিনিসহ উপাচার্য বাসভবনের মালি গেদু, বাংলা বিভাগের প্রহরী মফিজ, সাবিরুল হক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে চলে যান। পরে ফিরে এসে তিনি ও গেদু সাত নম্বর সেক্টরে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বার্তাবাহকে’র কাজ শুরু করেন। এছাড়াও তিনি রাজশাহী অঞ্চলের টেলিফোন শাখা বিচ্ছিন্নকরণের কাজ করতেন।
মকবুল হোসেন আরও দাবি করেন, ১৯৬২ সালের ১৮ আগস্ট মুখে করে কাগজ নিয়ে যাওয়ার সময় বিনোদপুর গেটে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাকেসহ অনেকজনকে চোখ বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় অনেককে হত্যা করা হয়। এ অবস্থায় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পাকিস্তানিরা তার গলায় গ্রেনেড বেঁধে লাথি মেরে পানিতে ফেলে দেয়।
পরদিন সকালে জ্ঞান ফেরার ঘণ্টাখানেক পর ভারতীয় বাহিনীর একটি গাড়ি দেখতে পান। পরে তারা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের কাছে ১৯৭২ সালে ভারতীয় এক ক্যাম্প কমান্ডের ক্যাপ্টেনের দেওয়া টেলিফোন শাখায় কাজের স্বীকৃতিপত্র, ১৯৯৪ সালের ভোটার পরিচয়পত্র, ২০১৭ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণের কাগজপত্র দেখান।
জানতে চাইলে মকবুল হোসেন বলেন, ‘২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর যান তিনি। ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম তোলার চেষ্টা করেছি। ২০১৭ সালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ে অংশগ্রহণ করেছি। ’
তিনি আরও বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধের পর সবাই স্বীকৃতি নিচ্ছিলো। আমি তো আর জানি না কাগজের এতো মূল্য। সেই সময়ে আমার স্ত্রী ও বড় ছেলে মারা যায়। তাই ওসব করার মানসিকতাও ছিল না। আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিটা দেন তাহলেই আমি খুশি। ’
জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও মুক্তিযোদ্ধা আবুল বাশার মিঞা বলেন, ‘আমি তাকে (মুকবুল) ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় টেলিফোন সংযোগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৯
এসএস/আরআইএস/