ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বরেন্দ্র জাদুঘরে অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
বরেন্দ্র জাদুঘরে অরক্ষিত প্রত্নসম্পদ

রাজশাহী: কালের সাক্ষী রাজশাহীর বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারকটি প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের সবচেয়ে বড় সম্ভার। শুধু তাই নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা হচ্ছে জাদুঘরটি। সময়ের ব্যবধানে এর সংগ্রহ বাড়লেও কলেবর বাড়েনি, উল্টো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে প্রত্মসম্পদ। 

১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া জাদুঘরটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, জাদুঘরের গ্যালরিতে প্রত্নসম্পদ সংরক্ষণের জন্য তিল ধরনের ঠাঁই নেই। বাইরের গ্রন্থাগার ভবনের নিচে পড়ে রয়েছে অনেক নিদর্শন।

বরেন্দ্র জাদুঘরের গ্রন্থাগার ভবনের নিচে পড়ে রয়েছে অনেক নিদর্শন।  ছবি: বাংলানিউজ

জাদুঘরের মাঝখানের খোলা জায়গার গ্যালারিতে শতাধিক প্রস্তর মূর্তিসহ নানা প্রত্নসম্পদ পড়ে রয়েছে। এরমধ্যে নবম শতকের দুর্গা সিংহবাহিনী, সূর্য, দশম শতকের বিষ্ণু (ত্রিবিক্রম), উপবিষ্ট গণেশ, এগারো শতকের চৌকাঠের অংশ বিশেষ, বারো শতকের উমা-মহেশ্বরসহ অসংখ্য মূর্তি। জাদুঘরের আঙিনার ওপরে ছাদ না থাকায় পুরাকীর্তিগুলো খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।  

গ্যালারির ঠিক সামনে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে আরও কিছু প্রত্নসম্পদ। মূল কমপ্লেক্সের ভেতরে পাহারা থাকলেও খোলা জায়গা পুরোটাই রয়েছে অরক্ষিত। জাদুঘরের ভেতরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা থাকলে কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দর্শণার্থীরা ছবি তুলছেন ঠিকই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী কেএম সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্নসম্পদ দেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী। অমূল্য এ সম্পদগুলো অনাদর-অবহেলায় ফেলে রাখা অত্যন্ত দুঃখজনক। রোদ-বৃষ্টিতে প্রত্নসম্পদগুলো সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা উচিত।

খোলা জায়গার গ্যালারিতে পড়ে রয়েছে শতাধিক প্রস্তর মূর্তিসহ নানা প্রত্নসম্পদ।  ছবি: বাংলানিউজ

জাদুঘরের সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, জাদুঘরের ভেতরে প্রত্নসম্পদ রাখার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এখানে ১১ হাজার প্রত্ননিদর্শন সংরক্ষণের জন্য মাত্র ১৪টি গ্যালারি কক্ষ রয়েছে। যা পর্যাপ্ত নয়। আরও গ্যালারি প্রয়োজন। ফলে বাধ্য হয়ে প্রত্ননিদর্শনগুলো বারান্দায় এবং খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত জাদুঘরের পূর্ণাঙ্গ ইনভেন্টরি প্রতিবেদন মতে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৮৫টি প্রত্নসামগ্রীসহ প্রায় তিন হাজার দুর্লভ বস্তু হারিয়েছে জাদুঘর থেকে। জাদুঘরে নিবন্ধিত নানা ধরনের প্রত্নসামগ্রীর ১৮৫টির কোনো হদিস নেই।  

বরেন্দ্র জাদুঘর।  ছবি: বাংলানিউজ

হারিয়ে যাওয়ায় প্রত্নসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে দু'টি ব্রোঞ্জ, দু'টি কপার, দু'টি লিনেন, একটি ব্রাশ, দু'টি সিলভার, একটি ক্রিস্টাল, ৪৭টি বিভিন্ন ধরনের পাথর, ১০১টি টেরাকোটা, ১৩টি কাগজ এবং দুটি প্রাণির চামড়া। এছাড়া পাঁচ হাজার ৯৭১টি নিবন্ধিত মুদ্রার মধ্যে ৩৩টি এবং ১৩ হাজার ৯৩৩টি গ্রন্থের মধ্যে ৮৫টি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না ১৩ হাজার ৫৭৬টি প্রকাশনার (পুস্তক, পুস্তিকা, গ্রন্থ, জার্নাল ইত্যাদি) মধ্যে তিন হাজার ৫২টি।

বরেন্দ্র জাদুঘরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আলী রেজা মুহম্মদ আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, জাদুঘরের নতুন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিষয়টি এখন সিন্ডিকেট সভায় পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। সিন্ডিকেটে পাস হলেই শিগগিরই নতুন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
এসএস/এমএফআই/এনটি  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।