ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাথা তুলেছে ‘স্মৃতি অম্লান’ 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
মাথা তুলেছে ‘স্মৃতি অম্লান’  ময়মনসিংহের স্তম্ভ ‘স্মৃতি অম্লান’। ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহ: ভাষা আন্দোলনে সংগ্রামমুখর ছিলো ময়মনসিংহও। অকুতোভয় ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগের চার বছরের মাথায় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (তৎকালীন পৌরসভা) চৌরাস্তা মোড়ের স্থানটিতেই নির্মিত হয়েছিলো প্রথম শহীদ মিনার। কিন্তু এর আয়ু ছিলো মাত্র ১৫ বছর! 

একাত্তরে মুক্তি সংগ্রামে স্বাধীনতাকামীদের এই জনপদে ঐতিহাসিক এই স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয় পাকিস্তানি হানাদাররা। তবে বায়ান্নের একুশে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণে আবারও মাথা তুলেছে হৃদয়ের এক স্তম্ভ ‘স্মৃতি অম্লান!’ 

আধুনিক ধ্রুপদী এই ভাস্কর্যটি ৫২ থেকে ৭১ পর্যন্ত শহীদদের স্মৃতিকেই যেন সগৌরবে ফিরিয়ে এনেছে; জানান দিচ্ছে তরুণ প্রজন্মকে।

 

বাঙালির ভাষা আন্দোলনের এই স্মারকের মাধ্যমেই ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একুশের চেতনা। মাতৃভাষার সম্মান আর মর্যাদা রক্ষায় শহীদদের স্মৃতিবাহী এই স্তম্ভটি প্রায় চার বছর আগে নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন (সাবেক পৌরসভা)।  

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিককালে ভাষা আন্দোলনে অগ্রসর জেলা হিসেবে স্বনামে খ্যাত ময়মনসিংহ। এই আন্দোলনকে তীব্রভাবে সঞ্চারিত করেছিলেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও শিক্ষকেরা। শহরের রেলস্টেশন এলাকায়ও প্রায় সময়েই ছাত্র-জনতার অবস্থান থাকতো।  ময়মনসিংহের স্তম্ভ ‘স্মৃতি অম্লান’।  ছবি: অনিক খানআজও বিস্মৃত হয়নি এই আন্দোলনের সৈনিক প্রয়াত রফিক উদ্দিন ভূইয়া, শামসুল হক, সৈয়দ বদরুদ্দিন হোসাইন, মোস্তফা এম এ মতিন, শিক্ষক আহমেদ সালেকদের লড়াকু ভূমিকা। শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণে নির্মিত হয়েছে ভাষা সৈনিক শামসুল হক মঞ্চ।  

গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামের শহীদ আব্দুল জব্বারের বুকের রক্তের মধ্যে দিয়েই ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন।  

ফলে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসের মতোই প্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন এই জব্বার। সেই তেজোদীপ্ত বিদ্রোহের সুর আজো ধ্বনিত হয় বাঙালির হৃদয়ে।  

রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দেওয়া জব্বারের দৌলতেই সেই পাঁচুয়া এখন জব্বার নগর। এই কৃতি মানবের নামেই গড়ে তোলা হয়েছে গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।  

বর্তমান ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের সামনে থেকে স্থানীয় জাদুঘরের সামনের সড়কে ১৯৫৬ সালে নির্মিত হয় শহরের প্রথম শহীদ মিনার।  ময়মনসিংহের স্তম্ভ ‘স্মৃতি অম্লান’।  ছবি: অনিক খানময়মনসিংহ অঞ্চলের ঐতিহাসিক নিদর্শন’ গ্রন্থের লেখক দর্জি আব্দুল ওয়াহাবের লেখা অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে অহংকারের এই প্রতীকটি ধ্বংস করে দেয় পাক হানাদাররা।  

পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে সেই থেকেই একুশের প্রথম প্রহরেই এখানে সমবেত হয় সবাই।  

তবে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবাহী প্রথম শহীদ মিনারের স্থানটি সংরক্ষণ অনিবার্য হয়ে ওঠে। তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভার উদ্যোগে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মাণ করা হয় ‘স্মৃতি অম্লান’। এর ভাস্কর হাসান আব্দুল্লাহ আল মেহেদী।  

তৎকালীন পৌরসভার মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইকরামুল হক টিটুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রথম শহীদ মিনারটি নান্দনিক অবয়বে ফিরিয়ে আনা হয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শৈল্পিক আদলে আধুনিক এই ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে শহীদদের বীরত্বগাঁথাকেও প্রকারান্তরে সম্মান জানানো হয়েছে।  

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. ইকরামুল হক টিটু বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিলো ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরই ধারবাহিকতায় দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে জাতি উপনীত হয় মুক্তিযুদ্ধে। যার ফল পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন হয়ে আসা মহান স্বাধীনতা।

‘জাতির সূর্য সন্তানদের মূল্যায়ন ও স্বর্ণালী ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করতেই স্মৃতি অম্লানকে নতুন করে নির্মিত করা হয়েছে। এই স্মারক স্থাপনাই ইতিহাসের কথা বলবে,’ যোগ করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।