নাগরিক সমস্যা নিরসনে মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় নগর ভবনে আয়োজিত সভায় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি।
সভার শুরুতে মেয়র বলেন, নগর এক্সপ্রেস বাস সার্ভিস ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা ছিল।
তিনি বলেন, সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনা স্ট্যান্ডগুলো একটি নিয়মের আওতায় আনার প্রয়োজন। তারা তা মানতে রাজি নয়। এই নগরে দুই হাজার অবৈধ ইঞ্জিনচালিত রিকশা ও কমপক্ষে ১১ হাজার অবৈধ অটোরিকশা চলাচল করছে। কিন্তু কোন রোডে কতটি গাড়ি চলাচল করবে, তা নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) বলা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেনা।
মেয়র আরও বলেন, ফুটপাত হকারমুক্ত করার ধারাবাহিকতায় লালবাজার এলাকায় অভিযান চালালে কতিপয় যুবক মাছ চুরির অভিযোগ এনে স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের এ ঘটনা কিছু পোর্টালে মাছ চুরি গেছে বলে সংবাদ ছাপিয়েছেন। অথচ মাছ ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যারা স্লোগান দিয়েছেন, তারা ক্ষমতাসীন দলের ও সাবেক মেয়রের বাসভবন ছড়ারপাড় এলাকার বাসিন্দা। মাছ ব্যবসায়ীরাও চুরির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন।
তাছাড়া ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ করতে গেলেও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে। একটি মহল টাকার বিনিময়ে হকারদের বসতে দিচ্ছে। আর সিসিক অভিযান চালালে তারা পালিয়ে যায়, পরক্ষণে আবার ফুটপাত দখল করা হয়। ক’দিন যাবত এসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি ৫ বছর পর বাসা-বাড়ির রি-অ্যাসেসম্যান্ট করার কথা থাকলেও সাড়ে ১৩ বছর পর এই প্রক্রিয়ায় হাত দিয়েছে সিসিক। এ জন্য নগর এলাকার বাসা-বাড়িতে একটি হলুদ ফরমে রি-অ্যাসেসম্যান্ট প্রক্রিয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু একটি মহল এটিকে ট্যাক্স আদায়ের চাঁদাবাজি বলে আখ্যা দিয়ে কিছু অনলাইন পোর্টালে সংবাদ ছাপাচ্ছে।
তাছাড়া নগরের খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আগামী বর্ষার আগে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে হবে। তাই সারা নগরে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে এক কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউণ্ড বিদ্যুৎ লাইনের কাজ সম্পন্ন করে সফলভাবে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্টারনেট ক্যাবলগুলো সামিট গ্রুপের সহায়তায় মাটির নিচে যাবে।
হকার প্রসঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আরও বলেন, একেকটি হকারের ২০-৩০টি দোকান রয়েছে। তাদের ৪-৫ তলা বাসা রয়েছে, এদেরকে হকার বলা যায়না। আর যারা চৌকি বসিয়ে কাপড় বিক্রি করছে তারা হকারের তালিকায় পড়েনা। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওরা ব্যবসা করে যাচ্ছে।
নাগরিক মতবিনিময় সভায় উন্মোক্ত আলোচনায় সিলেট চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তাহমিন আহমদ বলেন, যেসব ব্যবসায়ীরা টাকার বিনিময়ে তাদের দোকানের সামনে হকার বসান, চা-পানের দোকান বসান, তাদের লাইসেন্স বাতিল করার আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে চেম্বার অব কমার্স সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে।
এছাড়া পাইলট প্রকল্প হিসেবে নগরীর জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্রা রাস্তা পর্যন্ত সম্পূর্ণ হকারমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান নাগরিকরা।
বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মেয়র কেন একা হকার উচ্ছেদ অভিযানে নামবেন? কাউন্সিলরদের কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই? তারা যদি নিজ নিজ এলাকা সুন্দর করে রাখতেন, তাহলে সিলেট নগরী আজ নোংরা থাকতো না।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আরও বলেন, মেয়রের কাজে যদি কোনো বাধা আসে তাহলে, নগরবাসী মেনে নেবেনা। নগরবাসীকে সব নিয়মনীতি মেনে চললে এই সিলেট হবে সুন্দর নগরী।
সভায় সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আহমদ, রামকৃঞ্চ মিশনের অধ্যক্ষ চন্দ্রনাথা নন্দ মহারাজ, ব্যারিস্টার আরশ আলী, জেলা ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি শেখ মখন মিয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মিশফাক আহমদ মিশু, মহিলা চেম্বারের সভানেত্রী স্বর্ণলতা রায়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম, সিলেট জেলা সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিক, ইমাম সমিতির নেতা মাওলানা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৯ ঘন্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এনইউ/ইউবি