ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৪ ডিসেম্বর রাজৈর হানাদারমুক্ত দিবস 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
৪ ডিসেম্বর রাজৈর হানাদারমুক্ত দিবস 

মাদারীপুর: ৪ ডিসেম্বর মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলা হানাদারমুক্ত দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে ভোরের প্রথম আলো ফোটার মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত হয় এ উপজেলা।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে জেলার রাজৈর উপজেলায় হানাদারবাহিনী আস্তানা গড়ে তোলে। তবে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে আগস্ট মাসের প্রথম দিক থেকে হানাদারদের আক্রমণ করতে শুরু করে।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা একত্রিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আক্রমণ করে হানাদারদের ক্যাম্পে। তুমুল যুদ্ধ শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর সঙ্গে। রাত গড়িয়ে দিনের আলো ফুটে ওঠে। ৪ ডিসেম্বর ভোরে রাজৈর উপজেলা থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ছাগলছিড়া এলাকায় পালিয়ে যায় হানাদারবাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে বন্দি হয় ১৩৫ জন হানাদার। বিজয়ের পতাকা উড়ে শত্রুমুক্ত হয় উপজেলা।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার পাখুল্যা, লাউসার, কদমবাড়ি, কমলাপুর, মহিষমারী, ইশিবপুর, কবিরাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্প করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এসব অস্থায়ী ক্যাম্প থেকেই হানাদারবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে মুক্তিযোদ্ধারা।

রাজৈরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর মুক্তিকামী মানুষের কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দয়ে। একদিনে খালিয়ার সেন্দিয়ায় পাকিস্তানিবাহিনী ও রাজাকাররা আখ ক্ষেত ও ঝোপ জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ১৩১ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে।

পাকিস্তানিবাহিনী ও স্থানীয় রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় রাজৈর বড় ব্রিজ, আমগ্রাম ব্রিজ ও টেকেরহাটে। তবে এর মধ্যে পাখুল্যায় মুখোমুখি যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে। এ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন সাবেক রক্ষীবাহিনীর ডেপুটি ডিরেক্টর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সরোয়ার হোসেন মোল্যা।

জানা গেছে, পাখুল্যায় সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সম্মুখযুদ্ধ হয় হানাদারবাহিনীর সঙ্গে। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ঈদের আগের রাতে রাজৈর উপজেলার বৌলগ্রামে পাকিস্তানিবাহিনীকে অবরুদ্ধ করে রাখে মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াইয়ে পরাস্ত হয়ে ৩ ডিসেম্বর মধ্য রাতে পাকিস্তানিবাহিনী রাজৈর ছেড়ে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর পালিয়ে যায়।

পরের দিন ৪ ডিসেম্বর গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় ১৩৫ জন পাক হানাদারকে আটক করে মুক্তিযোদ্ধারা। শত্রুমুক্ত হয় রাজৈর উপজেলা!

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আক্ষেপ করে বলেন, ডিসেম্বর মাস এলেই মুক্তিযুদ্ধের কথা স্মরণে আসে। পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়। অথচ বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় ইতিহাস জানে না। রাজৈর উপজেলায় ১৯৭১ সালে কতটা কষ্ট করেছে মানুষ। কতজন হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে। কত ত্যাগের বিনিময়ে শত্রুমুক্ত হয়েছে রাজৈর। এতদিন পরেও রাজৈরে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মুতিস্তম্ভ। এই উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা প্রয়োজন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।