শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বাজারে যেমন হাঁস বেশি তেমনি ক্রেতারও ভিড়।
ক্রেতারা বলছেন, শীতটা জেঁকে পড়া মানেই খাওয়াদাওয়ার জম্পেশ আয়োজন।
হাঁস বিক্রেতারা জানান, শীতে খুলনাঞ্চলের মানুষের হাঁসের মাংস খাওয়া অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। যেন হাঁস খাওয়ার উৎসব শুরু হয়ে যায় এসময়। পাড়া মহল্লার পিকনিক-বনভোজনেও হাঁসের মাংস চলছে। আবার কেউ কেউ নতুন আত্মীয়-স্বজন ও রাজনৈতিক নেতাদের তুষ্ট করতে পাতিহাঁসের পাশাপাশি রাজহাঁস-চীনাহাঁস কিনছেন।
হাঁস বিক্রেতা কামরুল জানান, শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে হাঁস বেশি বিক্রি হচ্ছে। পিকনিক-বনভোজনেও হাঁসের মাংস চলছে। এছাড়া পরিবারের বিশেষ দিনে মেহমানদারদের খাওয়াতে পাতিহাঁসের পাশাপাশি রাজহাঁস-চীনাহাঁস কিনছেন অনেকে।
তিনি জানান, এ বাজারেই খুলনার সবচেয়ে বেশি হাঁস পাওয়া যায়। এখানে হাঁস আসে ডুমুরিয়ার শরাফপুর, চুকনগর, তালার জাতপুর এলাকা থেকে। বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চীনাহাঁস ও পাতিহাঁসের।
মোস্তাকিম বিল্লাহ নামে অপর এক হাঁস ব্যবসায়ী বলেন, শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাঁস কেনাবেচার ধুম পড়ে গেছে বাজারে। রাজহাঁস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা, পাতিহাঁস ২৫০ টাকা, চীনাহাঁস ৩০০-৩৫০ টাকা, দোয়াসলা ৩৫০ টাকা দরে। শীত পড়তে না পড়তেই হাঁসের দাম বেশ বেড়ে গেছে। রাজহাঁস কেজি প্রতি বেড়েছে ১৩০ টাকা। অন্য হাঁসে ৫০ টাকা বেড়েছে।
গরু, মুরগি কিংবা খাসির মাংস শহরের সবখানে পাওয়া গেলেও সব বাজারে পাতিহাঁস, চীনা হাঁস, রাজহাঁস মেলে না। কিন্তু যে কোনো দিন সকাল থেকে রাত অবধি হাঁস পাওয়া যায় খুলনার গল্লামারি বাজারে।
ভোজনবিলাসীরা যে কোনো হাঁসের মাংসের স্বাদ নিতে চাইলে এখান থেকে কিনে আনতে পারেন। হাঁসের পাশাপাশি দেশি মুরগি, কবুতর ও কোয়েল পাখি পাওয়া যায় এখানে। দামও অন্য বাজারের চেয়ে তুলনামূলক কম। তাজা শাকসবজিও মেলে এ বাজারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাজারে অন্য মাংসের চেয়ে হাঁসের চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে দামও। খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পাতি, চীনা ও রাজহাঁস এনেছেন বাজারে। মুরগির খাঁচাগুলোতে দেখা যাচ্ছে হাঁস। এই শীতে হাঁসের মাংসের সঙ্গে রুটির স্বাদ নিতে ভোজনবিলাসীরা আস্ত হাঁস কিনে নিচ্ছেন।
একটি বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, শীতের মৌসুমে হাঁসের মাংস খাওয়া একটা রীতির প্রচলন আছে এ অঞ্চলে। শীতে হাঁসের মাংসের স্বাদই আলাদা। যার কারণে শীত শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পরপর দুই সপ্তাহ হাঁস কিনেছি।
হাঁসের কদর বৃদ্ধি প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, মুরগি দেশি না সোনালি তা বোঝা কষ্টকর। কিন্তু হাঁসে এমন ঠকার সম্ভাবনা নেই। যার কারণে অনেকেরই খাদ্য তালিকায় এই শীতে হাঁস প্রথমে উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, শীতে খুলনার অনেক হোটেলে স্পেশাল মেন্যু হচ্ছে হাঁসের মাংস। যা ভোজনবিলাসীরা খুব আয়েশ করে খান।
গল্লামারির ইনসান সুপার মার্কেটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মাসুম বলেন, শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই শহরের ভোজনবিলাসীরা ছুটে আসছেন হাঁস কিনতে। সব ধরনের হাঁস এখানে পাওয়া যায় বলে মানুষের ভিড়টা বেশি। শীতের সময়টাতে হাঁসের মাংসের স্বাদ বেড়ে যাওয়ার ধারণা থেকেই অনেকে শীতের সময়টাকে হাঁসের মাংস খাওয়ার উপযুক্ত সময় বলে মনে করেন। এছাড়া হাঁসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হয়তোবা বাজারেও এ সময়টাতে হাঁসের প্রচুর আমদানি হয়। শীত এলেই হাঁসের মাংস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় এ অঞ্চলে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৯
এমআরএম/এএ