এতে করে একদিকে কৃষি জমির পরিমাণ কমছে তেমনি পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, মাগুরা সদর, মহম্মদপুর, শ্রীপুর ও শালিখা এ চার উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ১০২টি।
অন্যদিকে সদর উপজেলার বাগবাড়িয়া, খদ্দকুছুন্দি, হুলিনগন, পাতুড়িয়া এলাকার মধুমতি নদীর চর দখল করে একই জায়গায় গড়ে উঠেছে ২০ থেকে-২৫টি ইটভাটা।
অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর এ ভাটাগুলো অবৈধভাবে ইট পুড়িয়ে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু ভাটাগুলোতে অবৈধভাবে ইট পোড়ানো বন্ধ হয়নি।
এছাড়া সিংহভাগ ভাটায় সিমেন্টের তৈরি ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের চিমনির বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে স্বল্প উচ্চতার চিমনি। যা আইনত নিষিদ্ধ।
হুলিনগর গ্রামের রফিকুল বলেন, একই এলাকায় এত ইটভাটার কারণে দিন-রাত গ্রামের মধ্য দিয়ে মাটি টানা গাড়ি চলে। যে কারণে ২৪ ঘণ্টায় গ্রামটি ধুলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকে। এ জন্য তারা শ্বাসকষ্টসহ নানা অসুখে ভুগছেন। এলাকার লোকজন প্রতিনিয়ত ভাতের সঙ্গে ধুলাবালি খাচ্ছেন। ধুলা ও ধোয়ার কারণে গাছে ফলমূল ধরা বন্ধ হয়ে গেছে।
মাগুরা সদর উপজেলার লস্করপুর গ্রামের গোলজার শেখ। স্থানীয় মাঠে তার ফসলি জমি মাত্র এক বিঘা। এটিতেই তিন ফসল আবাদ করে চলে তার সংসার। সেই জমির পাশে সদরের ভিটাসাইর গ্রামের আওয়াল মোল্যা গড়ে তুলেছেন ইটভাটা। এ ভাটার প্রয়োজনেই এখন গোলজার শেখের জমির ওপর নজর পড়েছে তার। নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন গোলজার শেখের জমিটি ভাটার কাজে ব্যবহারের জন্য। একই অবস্থা ওই গ্রামের মোহাম্মদ শেখ, আবুল কাশেমসহ আরও অনেকের। ইটভাটায় জমি হারানোর ভয়ে শঙ্কিত এখন এলাকাবাসী। জেলা প্রশাসনের নাজির হরশিত শিকদার জানান, জেলায় মোট ১০২টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে মাত্র ৬টির পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন রয়েছে।
ভাটা সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে জানা গেছে, জেলার প্রতিটি ভাটায় মৌসুমজুড়ে গড়ে ৫০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। প্রতি ১ লাখ ইটে ৮০ টন থেকে ১০০ টন হিসাবে ১০২টি ইটভাটায় প্রয়োজন সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ। টন প্রতি ২,৫০০ টাকা হিসাবে যার মূল্য অন্তত শত কোটি টাকা। যা সংগৃহীত হয় জেলার বিভিন্ন বন ও বাঁশ বাগান থেকে।
মাগুরা কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রেজুলেশনের মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, তিন ফসলি জমিতে কোনো ইন্ডাস্ট্রি বা ইটভাটা করা যাবে না। বিষয়টি জেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বরদের জানানো হয়েছে। তবু কেউ যদি এসব জমিতে ইটভাটা করে সেটি হবে আইনের পরিপন্থি’। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সহায়তায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
আরএ