বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
জাহিদ মালেক বলেন, কেরানীগঞ্জের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক, নার্স এবং ওষুধের কোনো কমতি নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসার সব খরচ সরকার বহন করবে।
এছাড়া ৩৫ জনের মধ্যে কয়েকজনকে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকজনকে সেখানে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। রাস্তা প্রশস্ত না হওয়ায় তাদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে সময় লেগেছে। এ কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতির পরিমাণটা বেড়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোগীদের ক্ষতিপূরণ কারখানার মালিকদের দিতে বাধ্য করা হবে। ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন শ্রমিকে সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করে বিকট শব্দে আগুন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- ইমরান, বাবুল, রায়হান, খালেক, সালাউদ্দিন, সুজন, জিনারুল ইসলাম, আলম, জাকির হোসেন, ফয়সাল ও জাহাঙ্গীর।
ঢামেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন (আরএস) ডা. আরিফুল ইসলাম নবীন বাংলানিউজকে জানান, বুধবার (১১ ডিসেম্বর) রাত থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে অধিকাংশেরই ৯০ শতাংশ বার্ন রয়েছে।
এর আগে বুধবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার ‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানায় আগুন লাগে। ঘটনার সময় শ্রমিকরা কাজ করছিলেন। তখন হঠাৎই গ্যাস রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়।
ইঞ্জিনিয়ার এসে শ্রমিকদের আগুন লাগার খবর দেয়। এরপর শ্রমিকরা পানি ও কারখানায় থাকা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে তখনই তারা দগ্ধ হয়।
এ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০ হাজার স্কয়ার ফিট কারখানাটির ভেতরের সব মালামাল ও যন্ত্রাংশ পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের ধ্বংসস্তুপের ভেতর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জাকির হোসেন (২২) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় প্রায় ৩৫ জনকে ঢামেক বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরে আহতদের মধ্য থেকে রাত থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়।
‘প্রাইম পেট অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’র কারখানার গত দুই বছরে তিনবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যার দুটোই ঘটেছে চলতি বছরে। প্রতিটি অগ্নিকাণ্ড ছিল ভয়াবহ।
২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর কারখানাটিতে প্রথম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এরপর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগে। তবে ওই দু’টি অগ্নিকাণ্ডে কারখানার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
সর্বশেষ বুধবার তৃতীয়বারের মতো আগুন লাগে কারখানাটিতে।
আরও পড়ুন>
** অগ্নিকাণ্ড: ঢামেক হাসপাতালে স্বজনহারাদের আহাজারি
** কেরানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১০
** কেরানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯
** কেরানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও ৩ জনের মৃত্যু
** একই কারখানায় ২ বছরে তিন বার আগুন
** আগুনের সূত্রপাত ‘গ্যাস রুমে’, নেভাতে গিয়েই দগ্ধ শ্রমিকরা
***কেরানীগঞ্জে আগুন: কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতে ক্ষতি বেশি
***কেরানীগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানার আগুনে নিহত ১, দগ্ধ ৩২
***কেরানীগঞ্জে অগ্নিকাণ্ড: অনুমোদন ছিল না ওই কারখানার
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
পিএস/ওএইচ/