রাজশাহী: ‘বিদেশি মদের সঙ্গে রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ মিশ্র উপকরণে বানানো ককটেল মদপানের পর তার বিষক্রিয়াতেই মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীর ৬ জনের। উপকরণগুলো মিশিয়েই বিদেশি মদ বিক্রি করেছিলেন বিক্রেতারা।
এ ঘটনায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই পায় পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত চারজন হলেন-রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার সাগরপাড়া এলাকার পরিমল সিং (৬০), হাসেম আলীর ছেলে সাজু (৩০), পরিতোষ সিংয়ের ছেলে বাপ্পা সিং (২৮) ও রাজপাড়া থানার সিপাইপাড়া এলাকার ইফতেখার হোসেন সুমন (৫০)।
তাদের কাছ থেকে তিনটি কাঁচের তৈরি মদের খালি বোতল, মিশ্রিত মদ তৈরির তরল পদার্থ ভর্তি একটি প্লাস্টিকের তৈরি বোতল, তেঁতুলের বিচি ভর্তি একটি কাঁচের বোতল, কমলা রঙের ৫০ গ্রাম গুঁড়া রঙ, ২৯টি টিন ও প্লাস্টিকের তৈরি কর্ক, ১১টি কর্কের নিব, ৫০টি কর্কের প্রটেকশন এবং অ্যালকোহল ভর্তি দুটি প্লাস্টিকের সাদা বোতল জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে মদপানে অসুস্থ হওয়ার পর রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২ জানুয়ারি) বিকেল থেকে রোববার (৩ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন মহানগরীর হোসনীগঞ্জ এলাকার ছাত্রদল নেতা ফয়সাল হোসেন (২৮), জেলার বাগমারা উপজেলার শান্তাপাড়া এলাকার সজল (২৫), মহানগরীর বাকির মোড় এলাকার সাগর (২৫), হেতমখাঁ এলাকার তুহিন (২৬), কাদিরগঞ্জ এলাকার মুন আহমেদ (১৮) এবং দড়িখড়বোনা এলাকার ইশাকুল ইসলাম (২২)।
এর আগে রাজশাহী মহানগরীর হোসনীগঞ্জ এলাকায় ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে শুক্রবার (১ জানুয়ারি) রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে মদপানে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাতেই সাতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর এক করে মোট ছয়জনের মৃত্যু হয়।
সোমবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি দল অনুসন্ধানে নামে। তারা মদপানে মৃত ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনের এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য-সংগ্রহ করে। পরে ওই তথ্যানুযায়ী অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এখন তাদের কাছ থেকে জব্দ করা আলামতগুলো রাসায়নিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন যে, বাড়তি মুনাফার আশায় তারা বিদেশি মদের সঙ্গে রেক্টিফাইড স্পিরিটসহ অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে এক ধরনের মদ বানায়; যা তারা ‘ককটেল মদ’ নামে বিক্রি করে থাকেন। মিশ্রিত একই ধরনের মদ তারা মৃত ও অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছেও বিক্রি করেছিলেন। পান করা পর এর বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে।
এ ঘটনায় বোয়ালিয়া থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতারদের বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
এসএস/এএটি