ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নাচোলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এ কে এস রোকন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২১
নাচোলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভুয়া প্রশিক্ষণার্থী দেখিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

আর এ টাকা আত্মসাতের সঙ্গে সরাসরি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতোর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে নিজের অপরাধ ঢাকতে ও তথ্য পাচারের অভিযোগে তার অফিসের অফিস সহকারীকে ফাঁসানোর অভিযোগও পাওয়া গেছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতো।

জানা গেছে, কয়েক বছর ধরে আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পর্যায়ে নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর ১০০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে ভাতা হিসেবে ছয় হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তিন মাস মেয়াদের এসব প্রশিক্ষণে ২৫ জন নারী প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার নিয়ম। কিন্তু নাচোলে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ২০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাকি পাঁচজনের ভুয়া নাম ব্যবহার করে তাদের টাকা আত্মসাতের পাশাপাশি নিয়মিত ২০ জন প্রশিক্ষণার্থীকেও পুরো ছয় হাজার টাকা না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে নিজের অফিস স্টাফের স্ত্রীকে তালিকাভুক্ত করারও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে প্রশিক্ষণের ভাতার অর্থ ক্রসড চেকের মাধ্যমে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এটাও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর যুগ্মসচিব ও প্রকল্প পরিচালক শফিকুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যার স্মারক নম্বর- ৩২.০১.০০০০.০৪৭.১৬.০১৬.১৭-২৬০। এছাড়া ওই বছরের ১৯ নভেম্বর ৩২.০১.০০০০.০৪৭.১৬.০১৬.১৭-২৮২ নম্বর স্মারকপত্রে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে সোনালী ব্যাংকে ১০ টাকায় হিসাব খোলারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে নাচোল সোনালী ব্যাংকে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নির্দেশনার বিষয়টি জানে বলে জানিয়েছে। সেই সঙ্গে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কোনো প্রশিক্ষণার্থী ব্যাংক হিসাব খোলা হয়নি বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। অভিযোগকারীদের অভিযোগ, টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়নি।

অপরদিকে, প্রশিক্ষণের জন্য ভাড়া নেওয়া আদিবাসী একাডেমির পুরো টাকা পরিশোধ না করারও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নাচোল আদিবাসী একাডেমিকে ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল বাবদ সর্বমোট ৩১ হাজার ২০০ টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও দেওয়া হয় ১৮ হাজার টাকা। এ কথা জানিয়েছেন আদিবাসী একাডেমির সভাপতি যতীন হেমরম।

একই সঙ্গে প্রশিক্ষণার্থীদের ভাতার অর্থ ক্রসড চেকের মাধ্যমে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।

এদিকে, একটি সূত্র জানিয়েছে, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার নামে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ঢাকতে অফিস সহকারী এমদাদুল হককে তথ্য ফাঁসের অভিযোগে শোকজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে অফিসে আসতেও তাকে মৌখিকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এমদাদুল হক নিজেই।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা প্রভাতী মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করে বলেন, সারা দেশের কোথাও ব্যাংকের মাধ্যমে প্রশিক্ষণার্থীদের টাকা দেওয়া হচ্ছে না, এ জন্য আমিও নগদ টাকা দিচ্ছি।  

নির্দেশনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

উপজেলা পর্যায়ে নারীদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতুন নাইম মুন্নী বলেন, প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাকে জানান না। অনিয়ম হয়ে থাকলে বিষয়টির অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।

অন্যদিকে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিহা সুলতানা এ প্রসঙ্গে বলেন, এ বিষয়টি পুরোপুরি জানা নেই। তবে বিষয়টি এখন গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
 
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাহিদা আক্তার বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের অনিয়ম হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক মো. তরিকুল আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোমবার (৪ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।