ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সোনারগাঁও হোটেল-ঢাবি ছুঁয়ে যাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০২১
সোনারগাঁও হোটেল-ঢাবি ছুঁয়ে যাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে!

ঢাকা: রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকারের সবচেয়ে বড় প্রকল্প ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (উড়াল সড়ক) নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। আর নগরবাসীকে স্বস্তি দিতে নতুন করে রুট নির্ধারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।

এই প্রকল্পে নতুন একটি লিংক যুক্ত হতে যাচ্ছে, যেটা মগবাজার রেলক্রসিং থেকে শুরু হয়ে হোটেল সোনারগাঁও, হাতিরপুল-কাঁটাবন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছুঁয়ে পলাশীর মোড়ে শেষ হবে। নতুন রুট বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পের ব্যয়-মেয়াদ দুটোই আবারও বাড়ছে।  

‘সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্টে’ (দ্বিতীয় সংশোধন) এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।  

নতুন রুটসহ প্রকল্পের সমস্ত কাজ বাস্তবায়নে চার বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে ২৮ কোটি টাকা। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। চার বছর মেয়াদ বাড়ানোর ফলে এখন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের সময় ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বরাবর প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পাঠায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর চলমান প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা অনুমোদন দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রকল্পটি একনেকে উঠানো হবে।
 
প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী কাজী ফখরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া কিছুটা ব্যয়ও বাড়ছে। এই প্রকল্পে নতুন একটি লিংক যুক্ত হতে যাচ্ছে। যেটা মগবাজার রেলক্রসিং থেকে শুরু হয়ে হোটেল সোনারগাঁও, হাতিরপুল-কাঁটাবন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছুঁয়ে পলাশী মোড়ে শেষ হবে। তবে পরিকল্পনা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়নে সব থেকে চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে ভূমি অধিগ্রহণ। কারণ নিজের বসতভিটা কেউ ছাড়তে চায় না।

 সূত্র জানায়, চারলেন বিশিষ্ট ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। এছাড়া উঠানামার জন্য মোট ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে। র‌্যাম্পসহ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য হবে ৪৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার। তবে প্রকল্পের প্রধান রুট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।

মূল প্রকল্পটি ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প ব্যয় অপরিবর্তীত রেখে প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। প্রকল্পটির বিদ্যমান অঙ্গসমূহের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে প্রথম সংশোধন করা হয়। প্রথম সংশোধনীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা। একইসঙ্গে সময় বেড়ে দাঁড়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

দ্বিতীয় বারের মতো সংশোধনী আসছে প্রকল্পের। মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধি করে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত হচ্ছে। একইভাবে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ৯১৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকায়।
 
প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার জানান, প্রকল্পটি নির্মাণের সুবিধার্থে তিনটি ট্রাঞ্চে ভাগ করা হয়েছে। ট্রাঞ্চ-১. এয়ারপোর্ট-বনানী-রেলস্টেশন পর্যন্ত। ট্রাঞ্চ-২. বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার পর্যন্ত। ট্রাঞ্চ-৩. মগবাজার-চিটাগাং রোডের কুতুবখালী পর্যন্ত। প্রথম ধাপের নির্মাণ কাজের ১ হাজার ৫০০টি পাইলের মধ্যে ১ হাজার ৩৪০টি পাইল, ৩৫০টি পাইলক্যাপের মধ্যে ৩২৪টি পাইলক্যাপ, ৩৫০টি কলামের ২৩৯টি কলাম, ৩৫০টি ক্রসবিমের মধ্যে ১২৮টি সম্পন্ন হয়েছে। ৩ হাজার ১৫৪টি আইগার্ডারের মধ্যে ২২৪টি সম্পন্ন হয়েছে যার বাস্তব অগ্রগতি ৫৬ শতাংশ। ট্রাঞ্চ ২ এবং ট্রাঞ্চ ৩ এর প্রস্তুতিমূলক কাজের অংশ হিসেবে ওয়ার্ক শেড নির্মাণ, মিক্সিং প্ল্যান্ট নির্মাণ, লেবার শেড এবং সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কাজ চলমান। নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি।

 
সূত্র জানায়, প্রথম সংশোধিত ডিপিপিতে পরামর্শক খাতে মোট ব্যয় ছিল ১২২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে আরও ৩৯ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। অনুমোদিত প্রকল্পে ২৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণের জন্য ২ হাজার ৩৬১ কোটি টাকার সংস্থান ছিল। অতিরিক্ত ২ দশমিক ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য অতিরিক্ত ১৫২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বাড়তি লাগবে।

অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বরাবর পাঠানো হয়েছে যা প্রক্রিয়াধীন। প্রকল্পের আওতাধীন বনানী থেকে মালিবাগ অংশের ভৌত কাজের নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি। এই অংশের বিদ্যমান রেললাইনের উপর দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে।
 
প্রথম ধাপে এক্সপ্রেসওয়েটি বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বনানী পর্যন্ত যাবে। এ রুটের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। পাইল ক্যাপও বসে গেছে। এখন পাইল ক্যাপের ওপর দিয়ে বসানো হচ্ছে আই গার্ডার। এরপরেই আই গার্ডারের ওপরে বসবে স্ল্যাব। স্ল্যাবের ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে চলাচল করবে যানবাহন।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, নানা কারণে দ্রুত গতিতে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত হবে। যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন, যোগাযোগ ব্যয় এবং যানবাহন পরিচালন খরচ হ্রাস পাবে। তাছাড়া ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ হ্রাস পাবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজীকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে এ প্রকল্প।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলি-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে।

চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে যানজট দূর হবে।

সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, বাস্তবায়নের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোল প্লাজা, এর মধ্যে পাঁচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২১
এমআইএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।