ঢাকা : কিলোমিটার প্রতি খরচের হিসেবে বিশ্বের জনবহুল মহাসড়ক ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা চার লেন। গেলো বছরের মার্চে উদ্বোধন করা হয় মহাসড়কটি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কটিতে চলাচলের জন্য যানবাহনকে দিতে হবে টোল।
গেলো ৩ জানুয়ারি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক সংক্রান্ত একটি অংশীজন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যাতে এ মহাসড়কে চলাচলের জন্য টোল হার প্রস্তাব করে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। বৈঠকে পরিবহন মালিকদের বিরোধীতার মুখে টোল হার পুনর্বিন্যাসের জন্য ১৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
কত দিতে হবে প্রস্তাবিত টোল?
বৈঠক সূত্র থেকে প্রস্তাবিত টোল সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। মহাসড়কটিতে যানবাহন প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য চারটি দিক চিহ্নিত করা হয়েছে। সে সঙ্গে এ মহাসড়কের ভেতরে তিনটি সেতু ও সাতটি ফ্লাইওভার রয়েছে। সেতু ও ফ্লাইওভারগুলো বিবেচনা থেকে বাদ দিয়ে টোলের ভিত্তি হার প্রতি কিলোমিটার ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ৫৫ কিলোমিটারের ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পুরো মহাসড়কের পাশাপাশি যাত্রাবাড়ী-মাওয়া ও পাচ্চর-ভাঙ্গা অংশের জন্যও পৃথক টোল প্রদানেরও করা হয়েছে।
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের পুরো অংশের জন্য কিলোমিটারপ্রতি টোলের হার ট্রেইলারে ৫০ টাকা ৪৫ পয়সা, বড় ট্রাক ৪০ টাকা ৩৬ পয়সা, মাঝারি ট্রাক ২০ টাকা ১৮ পয়সা, ছোট ট্রাক ১৫ টাকা ১৪ পয়সা, বড় বাস ১৮ টাকা ১৬ পয়সা, ছোট বাস ১০ টাকা নয় পয়সা, মাইক্রোবাস ও পিকআপে আট টাকা সাত পয়সা, ব্যক্তিগত গাড়িতে পাঁচ টাকা পাঁচ পয়সা ও মোটর সাইকেলে এক টাকা এক পয়সা।
এ হিসাব অনুযায়ী এ মহাসড়কটি পার হতে ট্রেইলারকে দুই হাজার ৭৭৫ টাকা, বাড় ট্রাককে দুই হাজার ২২০ টাকা, মাঝারি ট্রাক এক হাজার ১১০ টাকা, ছোট ট্রাক ৮৩৩ টাকা, বড় বাস ৯৯৯ টাকা, ছোট বাস ৫৫৫ টাকা, মাইক্রোবাস ও পিকআপ ৪৪৪ টাকা, ব্যক্তিগত গাড়ি ২৭৮ টাকা এবং মোটর সাইকেল ৫৬ টাকা হারে টোল দিতে হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কে টোল আদায়ের শুরুর পর থেকে পোস্তগোলা (বুড়িগঙ্গা-১) সেতু, ধলেশ্বরী সেতু ও আড়িয়াল খাঁ সেতুতে আর টোল দিতে হবে না।
কী বলছেন পরিবহন মালিকরা?
সড়ক ও জনপড় অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত টোলকে অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মত দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।
ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রুস্তম আলী খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তাবিত টোলের হার অতিরিক্ত। কে বা কারা কীভাবে এ টোল নির্ধারণ করলো সে বিষয়ে আমরার জানা নেই। তবে টোলকে আমরা পরিবহন মালিকরা প্রত্যাখ্যান করেছি। তারা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন, তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, এ টোল নিয়ে আমরা পরিবহন মালিকরা কি বিপদে আছি, তা বলে বোঝানো যাবে না। এটা এমন এক ব্যবসা যেখানে ঢুকলে বের হওয়া কঠিন। এ টোলের কারণে অনেক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটেও আমাদের খরচ ওঠে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়কের যে টোল প্রস্তাব করা হয়েছে, তা অস্বাভাবিক ও অগ্রহণযোগ্য। এ টোল নির্ধারণের জন্য অনেক টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে, সেগুলো মাথায় রেখেই টোল নির্ধারণ করা উচিত।
তিনি বিষয়ে, এ টোল পুর্ননির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী. নতুন টোল নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, টোল আদায়ের বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে প্রস্তাবিত টোল উত্থাপন করা হয়েছে। সেটিতে আমাদের আপত্তি ছিল। সুতরাং সেটি চূড়ান্ত হয়নি। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টোল নির্ধারণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময় ০৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
ডিএন/এসআইএস