ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস

সে এক অভূতপূর্ব, অবিস্মরণীয় মুহূর্ত: আমু

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
সে এক অভূতপূর্ব, অবিস্মরণীয় মুহূর্ত: আমু সংগৃহীত ছবি

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের দৃশ্যপট স্বচক্ষে অবলোকন না করলে তার প্রতি জনগণের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার গভীরতা অনুধাবন করা অসম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, নেতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার নিদর্শনস্বরুপ বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স পর্যন্ত ছিল জনসমুদ্র— জনতার সেই ভিড়ের মধ্যে সেই পথ অতিক্রম করতে বঙ্গবন্ধুর প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছিল।

সদ্য স্বাধীন দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাবর্তন দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমির হোসেন আমু এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রেক্ষাপট এবং মানুষের প্রতীক্ষার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এটি বাঙালির জীবনে একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় অর্জন করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে না পর্যন্ত এ দেশের মানুষের কাছে বিজয় পূর্ণতা পায়নি। পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সেই বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। সেদিন স্বাধীন বাংলায় নতুন সূর্যের উদয় হয়। আসলে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশ কল্পনাতীত ছিল, সেটা তো হতো স্বাধীনতার অপূর্ণতা।

আমু আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর আমরা যখন বিজয় লাভ করলাম তখনও কিন্তু মানুষের মুখে কোনো হাসি ছিল না। বিজয়ের তৃপ্তি ছাপিয়ে শুধু জিজ্ঞাসা ছিল— 
বঙ্গবন্ধুর খবর কী? তিনি বেঁচে আছেন কিনা? আসবেন তো, কবে আসবেন? ৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় খবর ভেসে আসলো বঙ্গবন্ধু মুক্তি পেয়ে একটি বিশেষ বিমানে অজানার পথে। পরের দিন ৯ জানুয়ারি জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছেছেন। এরপর আমরা জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফিরছেন। বৃটিশ রাজকীয় বিমান বাহিনীর কমেট জেটটি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করলে সেখানে হাজারো জনসাধারণ তাকে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা দেয়। বঙ্গবন্ধুর সম্মানে ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। অভ্যর্থনা জানান ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। পালাম বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা এবং বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন বঙ্গবন্ধু। তখনই বঙ্গবন্ধু ইন্দিরা গান্ধীর কাছ থেকে ভারতীর সৈন্য প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা নিয়েছিলেন।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশে ফেরার মধ্য দিয়ে অবসান হলো দেশবাসীর দীর্ঘ প্রতীক্ষার। বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী কমেট জেটটি ঢাকার আকাশসীমায় দেখার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত লাখো জনতার জনসমুদ্র আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। লাখো মানুষের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে যায় আকাশ-বাতাশ। বিমানে সিঁড়ি দেওয়ার সাথে সাথে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকে ফুলের মালা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান। সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সে এক অভূতপূর্ব, অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। বঙ্গবন্ধু বিমান থেকে নেমে আসার সাথে সাথে ৩১ বার তোপধ্বনি করে রাষ্ট্রপ্রধানকে বরণ করা হয়। বাংলাদেশ সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার দেয়। গার্ড অব অনার নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দরে উপস্থিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিদেশি মিশনের সদস্য, মিত্র বাহিনীর পদস্থ সামরিক অফিসার, বাংলাদেশ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে করমর্দন শেষ করে যাত্রা শুরু করেন রেসকোর্সের (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) উদ্দেশে।

বঙ্গবন্ধুর চলার পথের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা আমু বলেন, নেতার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্বার নিদর্শনস্বরুপ বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স পর্যন্ত দীর্ঘ ৪ মাইল ছিল জনসমুদ্র। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ও বাংলাদেশের পতাকা দ্বারা সুসজ্জিত তোরণ, লাখো মানুষের গগনবিদারি জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে। জনতার সেই ভিড় ঠেলে বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স পর্যন্ত এই পথ অতিক্রম করতে বঙ্গবন্ধুর প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লেগেছিল। স্বচক্ষে অবলোকন না করলে জনগণের এই স্বতঃস্ফূর্ত অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালোবাসার গভীরতা অনুধাবন করা অসম্ভব। নেতার প্রতি মানুষের ভালোবাসার এই ছিল দৃশ্য অভূতপূর্ব, অবিস্মরণীয় ও ঐতিহাসিক। রেসকোর্সে তিনি যখন বক্তব্য দিলেন, তখন আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন। তার আবেগ ও দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে উপস্থিত লাখো জনতা আবেগে উদ্বেলিত, উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।

আমির হোসেন আমু আরও বলেন, আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই— যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালি জাতির কাছে ছিল একটি বড় প্রেরণা। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে, সদ্য স্বাধীন দেশকে এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতি ছিল জাতির জন্য অপরিহার্য। এ বছর এক নতুন প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয়ভাবে এবং জাতিংঘের সংস্থা ইউনেস্কোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। এই জন্মশতবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ১২ বছরের রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্ভিক, তেজস্বী, দূরদর্শী এবং সফল রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্বান্তের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার বাস্তব প্রতিফলন দেখিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২১
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।