ঢাকা: অবিলম্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ঢাকাবাসী নামে একটি সংগঠন।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সংগঠনটি।
এরপর একটি মিছিল বাহদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ শেষে রাজধানীর নবদ্বীপ বাসক লেনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
এ সময় ঢাকাবাসী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেক মিঠু বলেন, ভিত্তিহীন এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সুন্দর কাজগুলোকে অবমূল্যায়ন ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য করা হয়েছে। আজকের এই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আর অবিলম্বে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা ওমর আলী বলেন, আজকে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছি। এই সমাবেশে দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আনীত সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে অভিযানের নামে যাদের রুটি রুজির ওপর বুলডোজার চালানো হলো এবং দোকানপাট ভেঙে দিলো এতে শত শত লোক বেকার হয়েছে, শত শত দোকান মালিক পথে বসেছে, তাদের পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে ‘মানহানিকর বক্তব্য’ দেওয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন হয়েছে আদালতে। কাজী আনিসুর রহমান এবং অ্যাডভোকেট মো. সারওয়ার আলম নামে দুই ব্যক্তি সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন দুটি করেন। মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী দুই আবেদনকারীর আর্জি শুনেছেন, এ বিষয়ে আগামী ১৯ জানুয়ারি আদেশ দেবেন।
গত শনিবার রাজধানীতে এক মানববন্ধনে শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি অভিযোগ করেন, তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন এবং এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মেয়র তাপস সিটি করপোরেশন আইনের ৯(২)(জ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন সাঈদ খোকন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মেয়র তাপস সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি, তিনি মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। যেহেতু মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন, সুতরাং আইনি ব্যবস্থা নেব।
দুর্নীতির অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই দাবি করে তাপস বলেন, গত ১৭ মে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছেন। সেই অভিযান এখনও চলছে। সেখান গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে মার্কেট সংক্রান্ত দুর্নীতির কিছু তথ্য বের হয়ে এসেছে। সেখানে যে টাকা লেনদেন হয়েছে, তা বের হয়ে এসেছে। যাদের সঙ্গে টাকা লেনদেন হয়েছে, যারা এর সঙ্গে জড়িত তারাই এখন আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন।
পরে সংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ খোকন। সেখানে বলা হয়, তাপসের মান সম্মানের বাজারমূল্য কত? মামলার পূর্ণাঙ্গ বিবরণী পাওয়ার পর সেটা আমি জানতে পারব। এ মামলার আইনি মোকাবিলার পাশাপাশি রাজপথে দেনা-পাওনার হিসেব হবে, ইনশাআল্লাহ।
রাজধানীর দুই মার্কেটে নকশার বাইরে বরাদ্দ দোকান উচ্ছেদে সম্প্রতি অভিযান শুরু করে ডিএসসিসি। ওই ঘটনার পর থেকে ডিএসসিসির সাবেক ও বর্তমান মেয়রের মধ্যে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য চলছিল। গত ৩০ ডিসেম্বর সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আমলে নেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমামের আদালতে ফুলবাড়িয়া সিটি সুপারমার্কেট-২ ব্লক-এ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলু অভিযোগটি দাখিল করেন। ওই ঘটনার পর দুপক্ষের বিবাদটি প্রকাশ্য রূপ পায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২১
জিসিজি/এমজেএফ