ঢাকা: করোনা পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বের অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে দেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলাসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নানের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। এ দিন প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনোমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক লিগ টেবিল-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। এই রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোনো দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮.১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, চাষের মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ।
আওয়ামী লীগের সদস্য কাজিম উদ্দীনের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসে মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে দেশে করোনা ভাইরাস মোকাবিলাসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে। তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে। শিগগিরই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সুলতানা নাদিরার এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত ও নদী ভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না— এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত করে একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দেয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৫২২টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারির অপর এক প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশে এসে আটকে পড়া ও চাকুরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কাযক্রম নিয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে করোনাকালে চাকুরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে যোগাযোগসহ পত্র পাঠানো হয়। এতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চাকুরিচ্যুতদের যাবতীয় দেনা পাওনা পরিশোধসহ ছয় মাসের বেতনভাতা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওই দেশগুলোতে কোভিড-১৯ রিকভারি অ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এসকে/এমজেএফ