ঢাকা: হাইড্রোজেন জ্বালানি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রথম মাইলস্টোন হিসেবে বাংলাদেশ হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন-প্রকল্পের মাধ্যমে এই অগ্রযাত্রা শুরু হলো। হাইড্রোজেন উৎপাদনের পাশাপাশি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরির কাজও শুরু হয়েছে বলে জানায় বিসিএসআইআর।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিসিএসআইআর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। হাইড্রোজেন উৎপাদনের যাত্রা ও পাইলট প্লান্টের ১০ দিনব্যাপি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) মুহাম্মদ শওকত আলী ও সচিব শাহ আবদুল তারিক, চট্টগ্রাম গবেষণাগারের পরিচালক, ড. মোহাম্মদ মোস্তফা এবং প্রকল্প পরিচালক, ড. মো. আবদুস সালাম।
বাংলাদেশের জ্বালানি মিক্সে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হাইড্রোজেন জ্বালানি অন্তর্ভূক্তির বিসিএসআইআর “হাইড্রোজেন এনার্জি গবেষণাগার স্থাপন-প্রকল্প” ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ মেয়াদে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করছে। মূল লক্ষ্যমাত্রাসমূহ হলো হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ এবং সরবরাহ সংশ্লিষ্ট গবেষণা ও মান নিয়ন্ত্রণ এবং সে লক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণ ও জাতীয় পর্যায়ের একটি রেফারেন্স সেন্টারের আঙ্গিকে সেবা প্রদান। অক্টোবর ২০১৮ হতে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়।
পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, সাশ্রয়ী হাইড্রোজেন উৎপাদন এ প্রকল্পের অন্যতম মাইলস্টোন। দৈনন্দিন বর্জ্য ও বায়োমাসকে ফিডস্টক হিসাবে ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদনের পাইলট প্রসেস প্লান্ট স্থাপন কাজ বিজয়ের মাসে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।
প্রথমবারের মতো সংযোজিত প্রসেস প্লান্টটি বাংলাদেশের গবেষণা ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যার অনুকরণে বাণিজ্যিক উৎপাদনের শিল্পকারখানা স্থাপন করা সম্ভব হবে। এই শিল্পের সম্প্রসারণের মধ্য দিয়েই জয় হবে জ্বালানি সক্ষমতা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষমাত্র ।
পানিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে হাইড্রোজেন উৎপাদনের প্রযুক্তিও শিগগিরই সংযোজন হবে। উক্ত প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে ১৮ জানুয়ারি ২০২১ হতে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হলো।
বাংলাদেশের নিজস্ব জ্বালানি সম্পদের তালিকায় গ্যাস ও কয়লার মতো হাইড্রোজেনের অন্তর্ভূক্তি অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। হাইড্রোজেন একটি নবায়নযোগ্য ও সম্ভাবনাময় বিকল্প জ্বালানি যা পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। হাইড্রোজেনের জ্বালানি মান প্রচলিত জ্বালানি মানের প্রায় তিনগুণ। এর ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণ হয় না। বিদ্যমান প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা জয় করে জ্বালানি হিসেবে এর ব্যবহার বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
প্রচলিত জ্বালানি ব্যবস্থার পাশাপাশি হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহারের জন্য বৃহৎ অবকাঠামো ও বিনিয়োগের প্রয়োজন হয় না। পরিবহন ক্ষেত্রে জ্বালানি চাহিদা পূরণ, শক্তি উৎপাদন ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি শিল্পকারখানায় (তৈল পরিশোধন, এমোনিয়া, মিথানল, ইলেকট্রনিক্স ও খাদ্য শিল্পে) হাইড্রোজেনের চাহিদা ক্রমবর্ধমান।
হাইড্রোজেনের অনন্য জ্বালানি বৈশিষ্ট্যের কারণে ইহা কার্যকর এনার্জি ট্রানজিশনে সক্ষম। জ্বালানি মিশ্রণে বৃহৎ আকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানির অন্তর্ভূক্তি, শিল্পকারখানা ও যানবাহনের নির্গমন হতে পরিবেশ দূষণরোধ এবং অঞ্চলভিত্তিক এনার্জি বিতরণের মাধ্যমে এনার্জি সিস্টেমের সক্ষমতা অর্জনে হাইড্রোজেন প্রযুক্তি অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল চালিত যানবাহন অথবা সমন্বিত হিট ও পাওয়ার (CHPs) ইউনিট হতে কোন প্রকার পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ নির্গত হয় না। হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল শুধুমাত্র যাত্রী বহনের বাহন হিসেবে মূখ্য তা নয়; ট্রাক, রেল, বিমান ও জাহাজের জন্য ও মৌলিক ডিভাইস।
বাংলাদেশে পানি ও বায়োমাসের প্রাচূর্যতার কারণে তা হতে উৎপাদিত হাইড্রোজেন জ্বালানি ও শক্তির নিরাপত্তা বিধানসহ পরিবেশ দূষণরোধ, শক্তির মজুদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি হিসাবে অগ্রগণ্য । জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য উৎস হতে প্রাপ্ত এনার্জি হাইড্রোজেন রূপে মজুদ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনে জ্বালানি ও বিভিন্ন শক্তিতে রূপান্তর করে ব্যবহার করা যায়। জাতীয় গ্রিডে বৃহৎ আকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানির সংযোজন, সিস্টেমের স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং তাপ ও শক্তি উৎপাদনের বাহক হিসাবে এনার্জি মিক্সে হাইড্রোজেনের অন্তর্ভূক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এমআইএস/এমকেআর