ঢাকা: শিশুদের শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহিত করতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ রেজা নফর বলেছেন, ‘শিল্প ও সংস্কৃতিতে এ অঞ্চলে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ’
বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাজধানীর কসমস সেন্টারে ‘শেখ হাসিনা: অন দ্য রাইট সাইড অব হিস্ট্রি’-শীর্ষক দুই মাসব্যাপী চলমান শিল্পকর্ম প্রদর্শনী পরিদর্শন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
মোহাম্মদ রেজা নফর বলেন, ‘আপনার শিশুকে শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চায় অনুপ্রাণিত করুন। কোভিড-১৯ মহামারি অনেক কিছুই বদলে দিয়েছে। তবে আমি আশা করি, একটি নতুন বিশ্ব গড়ায় শিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। ’
কসমস গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ জামিল খান রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানান এবং প্রদর্শনীর বিষয়ে তাকে অবহিত করেন।
শিল্প ও সংস্কৃতিমনা রাষ্ট্রদূত রেজা নফর কোভিড-১৯-এর কারণে তার পরিবারের কয়েকজন বন্ধুসহ সবার মৃত্যুতে গভীর শোক জানান।
তিনি করোনা ভাইরাসের কারণে প্রতিটি জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে কোভিড-১৯ পরবর্তী যুগে সবকিছুকে নতুন করে চিন্তা-ভাবনা করার কথা বলেন।
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোভিড-১৯ মহামারি বৈশ্বিক অর্থনীতি, রাজনীতি এবং শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও বিশেষ অনুরাগ রয়েছে। ’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত রেজা নফর বলেন, ‘ছোটবেলায় প্রধানমন্ত্রীকে ঘুম পাড়ানোর সময় তার মা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পারস্যের কবি খাজা শামস-উদ-দীন মোহাম্মদ হাফিজ-ই সিরাজির কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন। যিনি হাফেজ বা হাফিজ ছদ্মনামে লিখতেন। ’
শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজকদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘এ শিল্প প্রদর্শনী পরিদর্শনে আসতে পারা আমার জন্য সম্মানের। শিল্পকর্মের প্রতি আমার স্ত্রী ও মেয়েরও বিশেষ আগ্রহ আছে। প্রদর্শনীটি আমাকে কোভিড-১৯ এর কারণে যে বন্দিদশা তৈরি হয়েছে, তা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছে। ’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এ প্রদর্শনীর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।
এখানে শিল্পকর্ম প্রদর্শনী দেখতে এসে আমি এক বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। ’
এক পৃথক বার্তায় আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘করোন ভাইরাস বিশ্বকে এক দুঃখের সাগরে ফেলে দিয়েছে এবং বর্তমান পরিবর্তিত এ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে নতুন পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে দেখা দিয়েছে। শিল্প একমাত্র মাধ্যম যা মানুষের মানসিক পরিস্থিতি ভালো করে দিতে পারে। ’
তিনি বলেন, ‘এ মূল্যবান ও হৃদয়ে দাগ কেটে যাওয়ার মতো চিত্রকর্মগুলোতে দক্ষ শিল্পীরা হৃদয়ে ধারণ করা জাতীয় ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের প্রতিটি চেতনা এবং ভালোবাসাকে দৃশ্যমান সূক্ষ্ম শিল্পকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ’
ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এ প্রদর্শনীর প্রতিটি চিত্রকর্ম স্বাধীনতচেতা বাঙালি শিল্পীরা তাদের মাতৃভূমির প্রতি কতটা যত্নশীল, তার বহিঃপ্রকাশ। সমৃদ্ধ এ প্রদর্শনীতে আসতে পারার বিশেষ সুযোগ পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। ’
এ সময় মাসুদ খান বলেন, ‘সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে শিল্প ও সংস্কৃতির বিশাল ভূমিকা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। ’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শিল্প ছাড়া আজকের বিশ্ব কল্পনাই করা যায় না। প্রতিটি শিল্পকর্ম তার নিজস্ব উপায়ে সমাজে শান্তি নিয়ে আসে। কোভিড-১৯ মহামারির এ সংকটময় সময়ে আমাদের সমাজের জন্য শিল্প আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ’
ইরানকে বাংলাদেশের অনেক পুরোনো বন্ধু উল্লেখ করে বাংলাদেশ ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন মাসুদ খান।
গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে এ শিল্প প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
কসমস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্যালারি কসমস সম্প্রতি কসমস আতেলিয়ার-৭১ এর সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে এক আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
টিআর/এসআই