ঢাকা: জনগণকে সম্পৃক্ত করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। একইসঙ্গে এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের উদ্বোধনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ) মাহমুদ হাসান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত প্রমুখ। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ, কে, এম রফিক আহাম্মদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্পের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির।
পরিবেশ মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য নিরাপদ আবাস গড়ে তোলার মাধ্যমে ‘শব্দদূষণমুক্ত পরিবেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্নমুখী সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শব্দদূষণের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করা হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় এটি সহনীয় পর্যায় নেমে আসবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবছর বিআরটিএ প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ নতুন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান যানবাহনে অহেতুক হর্ন, যত্রতত্র সাউন্ড বক্স, মাইকের মাধ্যমে উচ্চ শব্দ সৃষ্টি করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করা হচ্ছে।
এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিদ্যমান আইন/বিধি বাস্তবায়ন ও অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার সংস্কৃতি তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে শব্দদূষণের বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। তিনি এসময় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথানিয়মে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, জনগণকে বধির হওয়া থেকে রক্ষা করতে শব্দদূষণ বন্ধ করতেই হবে। এ লক্ষ্যে তিনি পঞ্চম, নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমে শব্দদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও প্রকল্পের পরিচালক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় পরিবহন শ্রমিক/চালক, শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মচারী, কারখানার নির্মাণশ্রমিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, ইমাম, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মোট ৯৫ হাজার ২শ’ ব্যক্তিকে শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়াও টেলিভিশন চ্যানেল ও বেতারে ধারাবাহিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া, মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিভিসি, ক্ষুদে বার্তা ও বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হবে। সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১২৮টি বিলবোর্ড ও ৬০টি সাইনবোর্ড স্থাপন, ৭ লাখ লিফলেট, ৭ লাখ স্টিকার, ১ হাজার ফোল্ডার এবং ১ হাজার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল মূদ্রণ ও বিতরণ করা হবে। সারাদেশে মোট ২ হাজার ভ্রাম্যমাণ আদালত/যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ সংশোধনক্রমে সময়োপযোগী বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ৬৪টি জেলায় শব্দের মাত্রা পরিমাপ বিষয়ক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা এবং তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা হবে। বিভাগীয় শহর ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে শব্দদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকির ওপর সমীক্ষা এবং বিধিমালা সংক্রান্ত ও দিবসভিত্তিক মোট ৯টি সভা আয়োজন করা হবে। একটি এলাকায় পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের আওতায় শব্দমাত্রার সার্বক্ষণিক অনলাইন পরিবীক্ষণ এবং রোডসাইড ডিসপ্লে স্থাপন করা হবে। কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য নির্ধারিত এলাকায় ৯টি ক্যাম্পেইন আয়োজন; ৫শ’ ১২টি এয়ারমাফ এবং ৪ হাজার এয়ারপ্লাগ সংগ্রহ ও বিতরণ এবং ৩ বছর আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উদযাপন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
জিসিজি/এফএম