ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বেনারসি পল্লীতে উচ্ছেদ, মাথায় হাত কারিগর-ব্যবসায়ীদের

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
বেনারসি পল্লীতে উচ্ছেদ, মাথায় হাত কারিগর-ব্যবসায়ীদের ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। উচ্ছেদ এলাকার একটি বড় অংশ জুড়ে বিস্তৃত পুরনো বেনারসি পল্লী এলাকা।

এদিকে ‘বিয়ের মৌসুমে’ এমন উচ্ছেদের কারণে মাথায় হাত বেনারসি শাড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর ও ব্যবসায়ীদের।
 
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা থেকে অভিযান শুরু করে ডিএনসিসি। মিরপুর-১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নান্নু মার্কেট মোড় থেকে উচ্ছেদ শুরু করে ডিএনসিসি।
 
১১ নম্বর বাজারের ঢাল বলে পরিচিত এলাকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশত বেনারসি শাড়ির দোকান। মিরপুর-১০ নম্বরের বেনারসি মার্কেট পরিচিত পাওয়ার আগে এটিই ছিল মূল বেনারসি মার্কেট। এছাড়াও মিরপুর ১০ নম্বরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বেনারসি এবং হাতের কাজ করা শাড়ি যায় এই ১১ নম্বর থেকেই।

এদিকে চলছে ‘বিয়ের মৌসুম’। শাড়ি-লেহেঙ্গার ব্যবসায়ীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে এমন অভিযানে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে দাবি এখানকার ব্যবসায়ী, কারিগর ও শ্রমিকদের। এসব দোকানে চাকরি করা বা দোকানের জন্য শাড়ি তৈরি করা অত্র এলাকার অনেকেরই বংশগত পেশা। নিজেদের বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভেঙে যেতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন নারী-শিশুরাও।

উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া স্থানীয়রা বলছেন, এখানে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ শাড়ির দোকান ও কারচুপির কারখানা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীল ছিলেন প্রায় দুই হাজার মানুষ।  
 
জিয়া সিল্ক হাউজ নামক একটি দোকানের মালিক আমিন উদ্দিন বলেন, করোনার পর বাজারটা আবার চাঙ্গা হচ্ছিল। এই দোকান আমার বাবা শুরু করেছিলেন। এই দোকানের উপর নির্ভর করেই আমাদের পরিবার চলেছে, আমি বড় হয়েছি এবং দোকানে ৬ জন কর্মী কাজ করেন। দোকানে নিয়মিত শাড়ি বানিয়ে দেন এখানকারই অনেক কারিগর। আমরা সবাই একরকম পথে বসে গেলাম।
 
সোহেল রানা নামের এখানকার এক কারিগর বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে কারচুপির কাজ শিখছি। আমার বাপে মায়েও তাই করত। এখন সব দোকান ভাইঙ্গা দিছে। মানে আমরা বেকার হইয়া গেলাম। কোথায় শাড়ি বানামু আর কোথায় বেচুম? আমরা এখন কী করুম?
 
দোকান ভেঙে দেওয়ায় বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা উদ্ধারেও বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন এখানকার পাইকারি শাড়ি ব্যবসায়ীরা।  

বাবুল শাড়ী হাউজের কর্ণধার বাবুল মিয়া বলেন, আমাদের ব্যবসা চলে অনেকখানি বাকিতে। কিছু মাল নিলে অর্ধেক টাকা দেয়, আবার পরের বার মাল নিতে আইস্যা আগের টাকার কিছু শোধ করে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় আমাদের বানানো শাড়ি অথবা ভারত থেকে আমদানি করে আনা শাড়ি যায়। মার্কেটে এমন অনেক টাকা পড়ে আছে। এখন যখন আমরা আর মাল দিতে পারুম না তখন আগের টাকা কেমনে উঠামু? আবার আমাদের কাছ থেকে যারা মাল নিত তাদের এখন শাড়ি দরকার, ওয়েডিং সিজন। তারা অন্যদের কাছ থেকে শাড়ি নেওয়া শুরু করলে আমাদের এই ব্যবসাই শেষ হয়ে যাবে।
 
তবে যেকোনো প্রকারে সড়কটি থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদে বদ্ধপরিকর ডিএনসিসি। এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এয়ারপোর্ট থেকে যারা মিরপুরে আসা যাওয়া করবেন তাদের জন্য বাইপাস হবে এই সড়ক। এই সড়ক ৬৮ ফিট চওড়া। যারাই দখল করে আছেন তাদের সরে যেতে হবে। এখানে কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে নাকি মাদকের আখড়া ছিল। সেগুলো আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। জনগণের সড়ক দখল করে থাকার কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন>> মিরপুরে উচ্ছেদ অভিযানে বাধা: রণক্ষেত্র এলাকা

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
এস এইচ এস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।