শরণখোলা, বাগেরহাট থেকে: শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের রাজাপুরের বাসিন্দা বৃদ্ধা কদমবানু (৬০)। ২০ থেকে ২১ বছর আগে স্বামী আলফাজ হাওলাদারকে হারান তিনি।
ভিটেমাটি-গৃহহীন লড়াকু কদমবানু বাস করছেন রাস্তার পাশের সরকারি জমিতে পলিথিনের ঝুপড়িতে। ৫ সন্তানের ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। কদমবানুর ৩ ছেলেও অভাবগ্রস্ত, ভূমিহীন-গৃহহীন।
বছরের পর বছর কষ্টের জীবন শেষে আগামী ২৩ জানুয়ারি মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উপহারের পাকা বাড়িতে উঠবেন কদমবানু। সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে তাকে।
কদমবানু বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বাংলানিউজকে বলেন, মজুরি খেটে ঠিক মতো জীবনই চলে না জমি কেনা এবং বাড়ি বানানোর টাকা পামু কই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘর না দিলে বাকি জীবন হয়তো ঝুপড়িতে কাটাতে হতো।
প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করে তিনি বলেন, আমাদের মতো গরিবদের ঘর করে দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে দোয়া করি। আল্লাহ যেন শেখের বেটিকে মানুষের সেবা করার আরও সুযোগ দেন।
কদমবানুর মতো এখানকার আরেক নারী মিনারা খাতুন। ২০০৭/০৮ সালের দিকে তার স্বামীকে জলদস্যুরা হত্যা করে। মিনারা খাতুন তার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েকে নিয়ে সরকারি জমিতে জরাজীর্ণ ঝুপড়িতে থাকেন।
মিনারা খাতুন এবং তার মেয়েও পেয়েছেন মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উপহারের পাকা বাড়ি।
কদমবানু, মিনারা খাতুনের মতো শরণখোলায় প্রথম দফায় ২০০ পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের পাকা বাড়ি। আগামী ২৩ জানুয়ারি এসব বাড়ি হস্তান্তর করা হবে।
শুধু বাগেরহাটের শরণখোলায় নয় সারা দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষের তালিকা করে ঘর করে দিচ্ছে সরকার। যাদের ভূমি নেই তাদের সরকারে খাস জমি থেকে ২ শতাংশ ভিটে এবং ঘর দিচ্ছে সরকার। যাদের ভিটে আছে ঘর নাই তাদের ঘর দিচ্ছে সরকার।
২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর হস্তান্তর করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে মুজিব বর্ষে প্রায় ৯ লাখ পরিবারকে ঘর দেবে সরকার।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে দুই কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দুটি রুম ছাড়াও সামনে একটি বারান্দা, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর এবং একটি খোলা জায়গা থাকবে। পুরো ঘরটি নির্মাণের জন্য খরচ হবে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা এবং মালামাল পরিবহনের জন্য ৪ হাজার টাকা।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মুজিব বর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না- সরকারের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছে সরকার।
২৩ জানুয়ারি ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রী প্রদান করবেন। একই সঙ্গে ব্যারাকের মাধ্যমে ২১টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় ৪৪ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হবে বলে জানান মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, সারা দুনিয়াতে এটি প্রথম ঘটনা এবং একমাত্র ঘটনা একসঙ্গে বিনে পয়সায় এত ঘর করে দেওয়া। ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ সারা দুনিয়াতে একটি নজির স্থাপন করলেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিচালক বলেন, একটি ঘর শুধু একটি আশ্রয় স্থল নয়, যার কিছুই ছিল না এই ঘরটি তার জন্য আত্ম মর্যাদার। আরও সেবা পাবে। তাদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি সকল নাগরিক সুবিধা দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুজিব বর্ষে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। সকলের জন্য ঘর নির্মাণ করে শেষ না হওয়া পর্যন্ত বরাদ্দ চলতে থাকবে।
২৩ জানুয়ারি প্রায় ৬৯ হাজার পরিবারের জন্য ঘর উদ্বোধনের পর থেকে আগামী ১ মাসের মধ্যে আরও ১ লাখ ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান মাহবুব হোসনে।
সারা বাংলাদেশে ঘরও নাই, জমিও নাই এমন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং ভিটেমাটি আছে, ঘর জরাজীর্ণ কিংবা ঘর নাই এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সারা বাংলাদেশে যে তালিকা করা হয়েছে সব মিলিয়ে সেই তালিকায় ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবার রয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে আশ্রয়ণ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস অবধি ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল- ভূমিহীন, গৃহহীন, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
এমইউএম/এইচএডি