ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
করোনা প্রতিরোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ ছবি: ডিএইচ বাদল ও জিএম মুজিবুর

ঢাকা: অবশেষে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন এসেছে দেশে। করোনা ভ্যাকসিনের প্রায় ২০ লাখ ডোজ (কোভিশিল্ড) বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে বন্ধু রাষ্ট্র ভারত।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে এসব ভ্যাকসিনের (কোভিশিল্ড) চালান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়।

ভারতের উড়োজাহাজ থেকে এসব ভ্যাকসিনের চালান বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ঢাকা জেলা ইপিআই স্টোরে (সংরক্ষণাগার)। বিমানবন্দর থেকে ইপিআই স্টোর পর্যন্ত পুরো সড়কেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বহনকারী দুটি বিশেষ কাভার্ড ভ্যানকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিয়ে নিয়ে আসা হয়। ভ্যাকসিন বহনকারী কাভার্ডভ্যান দুটি খুব সাবধানতার সঙ্গে ধীর গতিতে সড়কে চালানো হয়েছিল। পরবর্তীতে এসব ভ্যাকসিন অত্যন্ত যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করে রাখা হয় তেজগাঁওয়ের জেলা ইপিআই স্টোরে।

প্লেন থেকে নামিকে কাভার্ডভ্যানে তোলা হচ্ছে ভ্যাকসিন 

বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কাছে ২০ লাখ ডোজ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন হস্তান্তর করা হয়। ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী আনুষ্ঠানিকভাবে টিকাগুলো হস্তান্তর করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ সরকারের দায়িত্বশীল অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুসম্পর্কের কারণেই এসব ভ্যাকসিন দেশে এসেছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

আজ ঐতিহাসিক একটি দিন উল্লেখ করে ভ্যাকসিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে যেভাবে সহায়তা করেছিল, করোনা মহামারির এই বিপদেও ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। এই ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হলো।

ভারত থেকে ভ্যাকসিন বহন করে আনা প্লেন

ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ভারত প্রতিবেশী দেশের পাশে দাঁড়াতে চায়। ভারতে ভ্যাকসিন বিতরণের মাত্র চার দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ করোনা ভ্যাকসিন পেয়েছে। দুই দেশ একযোগে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

তেজগাঁওয়ের ইপিআই স্টোর:
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ভ্যাকসিন বহনকারী কাভার্ডভ্যান দুটি তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ইপিআই স্টোরে (সংরক্ষণাগার) পৌছায়। এরপর ইপিআই স্টোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাওলা বক্স চৌধুরীর তত্ত্বাবধায়নে কাভার্ডভ্যান থেকে ভ্যাকসিনের কার্টনগুলো নামিয়ে স্টোরের ভেতরে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। দুটি কাভার্ডভ্যানের একটি থেকে ৬০ কার্টন, অপরটি থেকে ১০৭ কার্টন মোট ১৬৭ কার্টন ভ্যাকসিন নামানো হয়।

ইপিআই স্টোরের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. মাওলা বক্স চৌধুরী বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য আমাদের কোল্ড বক্স আছে, সেখানে ২৪টি আইস প্যাক দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই কোল্ড বক্সে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন রাখা যায়। দেশের যেকোনো জায়গায় এই ভ্যাকসিন ১২-১৮ ঘণ্টার মধ্যে সবচেয়ে দূরে যে জেলাটি আছে পঞ্চগড় অথবা কক্সবাজারে সেখানো পৌঁছে দেওয়া যাবে। যদিও আমাদের হাতে থাকছে ৭২ ঘণ্টা সময়। সুতরাং ভ্যাকসিন পরিবহনে কোনো ঝুঁকি নেই। ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য সারা দেশেই ব্যবস্থা আছে। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে।

ইপিআই স্টোরে নেওয়া হচ্ছে ভ্যাকসিন

ভারতের উপহার দেওয়া প্রায় ২০ লাখ ডোজ করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন সম্পূর্ণই মজুদ রাখা হয়েছে ঢাকা জেলা ইপিআই স্টোরে। এখানে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়ার তাপমাত্রায় ভ্যাকসিনগুলো সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ঢাকা জেলা ইপিআই স্টোরে টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণের জন্য এখানে রয়েছে রিমোট কন্ট্রোল টেম্পারেচার মনিটরিং ডিভাইস। এর মাধ্যমে হেড অফিস থেকে স্টোরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও এই স্টোরে রয়েছে ফ্রিজট্যাগ সিস্টেম। ফ্রিজট্যাগ সিস্টেমের মাধ্যমে গত দুই মাস আগের টেম্পারেচার দেখা যাবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা বললেন
তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ইপিআই স্টোরে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন মজুদ রাখার পর দুপুর আড়াইটার দিকে সংরক্ষণাগারের ব্যবস্থাপনা পরিদর্শন করতে আসেন স্বাস্থমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

তিনি বলেন, সরেজমিনে দেখলাম এই গোডাউনের ভেতরে খুবই সুন্দরভাবে ভ্যাকসিনগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। ভ্যাকসিন সরবরাহের বিষয়ে ন্যাশনাল একটি প্ল্যান হয়েছে। ওই প্ল্যান অনুযায়ী ভ্যাকসিনগুলো সব জায়গাতে দেওয়া হবে। প্রথমে ভ্যাকসিনগুলো কোথায় কোথায় যাবে? কীভাবে যাবে? তা সবই ওই প্ল্যানে রয়েছে। শুরুতে আমরা একটি ট্রায়াল রানের (পরীক্ষামূলক) ব্যবস্থা করছি, তবে সেটির তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। খুব শিগগিরই একটি তারিখ আমরা পেয়ে যাবে। সে অনুযায়ী আমরা ট্রায়াল রানে যাব। এরপর সারা দেশে এই ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে।

ইপিআই স্টোর পরিদর্শন করেন স্বাস্থমন্ত্রী জাহিদ মালেক

স্বাস্থমন্ত্রী বলেন, ওই ট্রায়াল রানে সব ক্যাটগরির ব্যক্তিদের রাখা হবে। সেখানে চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থকর্মী, পুলিশ, আর্মি, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের রাখা হবে। সেখাসে বয়স্ক লোকরাও থাকবেন।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী আরও ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসার কথা রয়েছে। আসা করি আগামী সপ্তাহে তা দেশে চলে আসবে। সেগুলো এলে মোট ৭০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেব, যোগ করেন স্বাস্থমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

ঢাকা মেডিক্যালে থাকবে ৪টি ব্যুথ:
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী প্রথমে চারটি সরকারি হাসপাতাল থেকে করোনা প্রতিরোধী ভ্যকিসিন দেওয়া হবে। এরমধ্যে অন্যতম ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল। ইতোমধ্যে ঢামেক কর্তৃপক্ষ্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছে। প্রথমে ৪টি বুথ নির্মাণ করে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢামেক হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিন দেশে এসেছে। করোনা প্রতিরোধে এখন সব দিক দিয়ে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২১
এসজেএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।