মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের সবচেয়ে বড় মাছের বাজার শেরপুর। এই অঞ্চলটিকে সিলেটের প্রবেশদ্বার বলা হয়।
শুধু শেরপুর নয়, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়াসহ প্রায় সবগুলো হাওর বিলে এখন পাওয়া যাচ্ছে সুস্বাদু বোয়াল মাছ। এ মাছ সম্পর্ক মাছপ্রিয় বাঙালির আগ্রহের শেষ নেই।
এ ব্যাপারে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বোয়াল সিলুরিডে গোত্রের অন্তর্গত একটি ক্যাটফিশ। এর ইংরেজি নাম Helicopter catfish এবং বৈজ্ঞানিক নাম Wallago attu। এই প্রজাতির মাছের দেহ লম্বা ও পাশ চ্যাপ্টা। দেশ আঁশহীন। মাথা চ্যাপ্টা এবং দুটি লম্বা ও দুটি খাটো স্পর্শী আছে। এদের দৈর্য্য প্রায় ২০০ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৪৫ কেজিরও বেশি হতে পারে। ’
বোয়াল মাছের উপকারিতা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, বোয়াল মাছের উপকারিতা রয়েছে যথেষ্ট। বোয়াল মাছ খেতে অত্যান্ত সুস্বাদু। এই মাছ ঝোল করে ও ভুনা উভয় অবস্থায় সুন্দরভাবে খাওয়া যায়। তবে এটি যদি কোনো নদীর বড় মাছ হয় তাহলে তো স্বাদের শেষ নেই। বোয়াল মাছের পুষ্টিগুণ থাকায় এর চাহিদা ব্যপক রয়েছে। এই মাছ সাধারণত বড় নদী, হ্রদ, বিল, হাওরসহ প্রভৃতি জলাশয়ে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে মাছ চাষিরা পুকুরে ও এটি চাষ করছে। বোয়াল মাছটি বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া আফগানিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এর দেখা মেলে। এই বোয়াল মাছ ছোট ছোট মাছগুলোকে খায় এজন্য একে ‘মিষ্টিজলের হাঙর’ বলা হয়।
এর শারীরিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা প্রসঙ্গে ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান বলেন, বোয়াল মাছের শরীর দীর্ঘ হয়। উভয় পাশ চাপা হয় এবং ক্রমশ লেজের দিকে সরু হয়ে থাকে। এর পেছনের দিক সোজা হয়। মুখ বড় আকারের হয় এবং মুখের মধ্যে কিছু সুচালো দাঁত আছে। মাথা নরম ত্বক দিয়ে আচ্ছাদিত হয়। নিম্ন চোয়াল ওপরের চোয়ালের তুলনায় দীর্ঘ হয়। এদের দুই জোড়া গোফ আছে এবং এক জোড়া খুব দীর্ঘ হয়। গোফের জন্য তাদেরকে ক্যাটফিশ বলা হয়। পৃষ্ঠদেশীয় পাখনা ছোট এবং কোনো কাঁটা নেই। বক্ষের দিকে পাখনায় কাঁটা থাকে। পায়ূ খুব দীর্ঘ হয়। লেজের পাখনা দুইভাগে বিভক্ত। বোয়ালের শরীরের রঙ ফ্যাকাশে সাদা। এদের শরীরের কোন আঁশ নেই।
বোয়াল মাছের পুষ্টিগুণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ গবেষক বলেন, এ মাছের উপকারীতা অনেক। বোয়াল মাছ খেলে শরীরে শক্তি বাড়ে। শরীর সুস্থ রাখতে মাছ খাওয়ার অভ্যাস রাখুন। এই মাছ খেলে রক্ত ও পিত্তকে বিশুদ্ধ করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের শরীরে থাকা ‘ওমেগা থ্রি’ ফ্যাটি এসিড দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তাই যারা সারাদিন কম্পিউটার বা কোনো ধরনের ডিজিটাল স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করেন, তাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় মাছ থাকা এক রকম আবশ্যক। মাছের ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড শরীরে প্রবেশ করার পর ‘ফিল গুড’হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মানসিক চাপ অনেক কমতে থাকে দ্রুত; সেই সঙ্গে মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তাই মানসিক চাপ দূরে রাখতে চাইলে নিয়মিত মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে বলে জানান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২১
বিবিবি/এমএমএস