ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

খেজুর রস সংগ্রহে প্লাস্টিক যুগের অশনি সংকেত!

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২১
খেজুর রস সংগ্রহে প্লাস্টিক যুগের অশনি সংকেত!

ফেনী: কালের বিবর্তনে ‘প্লাস্টিক যুগের’ ছোঁয়া লেগেছে খেজুর রস সংগ্রহেও। আমাদের ঐতিহ্যবাহী মাটির হাঁড়ির জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিকের বোতল।

মাটির হাঁড়িতে করেই খেজুরের রস সংগ্রহের চল আছে বাংলাদেশের সব এলাকায়, যা প্রকৃত অর্থেই স্বাস্থ্যসম্মত।  

চিকিৎসকরা বলছেন, মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ ছিল স্বাস্থ্যসম্মত। আর সে তুলনায় প্লাস্টিকের বোতল একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। অপরদিকে রস আহরণকারীরা বলছেন, মাটির হাঁড়ির চাইতে প্লাস্টিকের বোতলে সুবিধা বেশি।

সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজীর মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুপাশের খেজুর গাছ থেকে চলছে রস আহরণ। গাছে গাছে ঝুলছে প্লাস্টিকের বোতল। খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।

শীত আর খেজুর রস। এ দুটি বিষয় যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। খেজুর রস আহরণের চিত্র যেন শীতেরই প্রতিনিধিত্ব করে।  

ফেনীর সোনাগাজী- ফুলগাজী- পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছ থেকে রস  সংগ্আরহ করা হয়।  এসব এলাকার কোথাও আর মাটির হাঁড়ির দেখা মিলছে না।  

রস সংগ্রহের সময় সোনাগাজী মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার গাছি আফসার উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করলে পাখি মুখ দিতে পারে না। ময়লা পড়ে না। প্লাস্টিকের বোতল নিয়ে বড় গাছে ওঠা-নামা করা সহজ। আর ছোট গাছে কুকুর-বিড়ালের ‘জিহ্বা’ থেকে রস রক্ষা করা যায়। এছাড়া মাটির হাঁড়ির দামও বেশি। প্লাস্টিকের বোতলের দাম কম।  

চর-চান্দিয়া এলাকার কবির আহম্মদ নামের আরেকজন জানান, প্রতিদিন বিকেলে গাছ কেটে তাতে বোতল লাগানো হয়। গাছের রসের ওপর নির্ভর করে বোতলের আকার। সারা রাত টপ টপ করে রস পড়ে। সকালে সূর্য ওঠার আগেই, কিংবা বোতল রসে ভরে গেলে নামিয়ে আনতে হয়।


সোনাগাজী এলাকার বাসিন্দা শেখ আবদুল হান্নান। পেশায় তিনি শিক্ষক। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, মাটির হাঁড়িতে খেজুর গাছ থেকে রাতভর রস পড়তে থাকতো। সেই রস ভোরে সূর্য উঠার আগে গাছিরা এক জায়গায় জড়ো করতেন। কিন্তু এখন মাটির হাঁড়ির পরিবর্তে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করেন গাছিরা। এটা আমার কাছে স্বাস্থ্যসম্মত মনে হয় না।

জেলার পরশুরাম চিথলিয়া এলাকার আজগর আলী বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের অনেক সুবিধা আছে। আবার অসুবিধাও আছে। মাটির হাঁড়িতে রস সংগ্রহ করলে সে রস থাকতো একদম টাটকা। আর বোতলে বেশি সময় রস রাখলে গন্ধ হয়ে যায়। রং ও স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়।

প্রতিদিন সকালে জেলার সোনাগাজী পৌর শহরের জিরো পয়েন্টে জমে উঠে রসের হাট। উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাছিরা সেখানে রস নিয়ে যান। জেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা রস কেনার জন্য যান সেখানে।  

প্লাস্টিকের বোতলে রস আহরণের স্বাস্থ্যগত দিক নিয়ে কথা হয় ফেনীর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ইকবাল হোসেন ভূইঁয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বোতলের চাইতে মাটির হাঁড়ির স্বাস্থ্যগত উপকারিতা বেশি। মাটির হাঁড়ি বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থ শোষণ করতে পারে এবং অনেক জীবাণু ধ্বংস করতে পারে, যা প্লাস্টিকের বোতল করতে পারে না।  

‘কাঁচা খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাস থাকতে পারে যার কারণে মস্তিষ্কের প্রদাহ জনিত রোগ এনকাফাইটিস হতে পারে। এর ফলে রোগীর প্রথমে জ্বর এবং খিচুনি হয়- পরে রোগী মারাও যেতে পারেন। ’ 

এ চিকিৎসক আরও জানান, খেজুরের রস খেতে হলে উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করে খেতে হবে। উচ্চ তাপমাত্রায় গরম করলে ভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২১
এসএইচডি/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।