ঢাকা: ভুয়া কাগজ তৈরি করে সাফল্যের কথা বলে এবং নানা কৌশলে কেডিএস গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান কেওয়াই স্টিল মিলসের প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন সাবেক কর্মকর্তা মনির হোসেন। এ ঘটনায় কোম্পানির সঙ্গে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাতসহ নানা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের পর একের পর এক বেরিয়ে আসছে মনির হোসেনের নানা অপকর্মের তথ্য। কেওয়াই স্টিল মিলসের শীর্ষ পদে থেকে তিনি দীর্ঘদিন কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি সরিয়ে ফেলেছেন অনেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। সম্প্রতি তার অপকর্ম ও মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছে কেওয়াই স্টিল মিলস।
জানা গেছে, মনির হোসেন কেওয়াই স্টিলে নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান ২০০৭ সালে। তার বেতন ছিল দুই লাখ টাকা। তবে এমন বেতন পাওয়ার পরও তিনি প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে কোম্পানির মালিকদের সব সময় সাফল্যের কথা বলতেন। অথচ তার সময়েই কোম্পানির ৩০০ কোটি টাকার ব্যাংক দায় বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার কোটি টাকায়। এসব অসঙ্গতি টের পাওয়ায় ২০১৮ সালে তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে ওই সময় প্রতিষ্ঠানের তিনি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেন। পরে ব্যাংকে যোগাযোগ করে কোম্পানি এ বিষয়ে জানতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মনির হোসেন এইচ.আর কয়েল আমদানিতে দুর্নীতি ও কোম্পানির টাকায় বন্ধুদের নিয়ে বিদেশে ভ্রমণের নামে বড় অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ভ্রমণের সঙ্গে কোম্পানির কোনো ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা ছিল না। তার সব ভ্রমণ টিকিটের বিপক্ষে হাতে লেখা চেক আছে। এসব কারণে তাকে বরখাস্ত করার সময় তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, কোম্পানি যখন তাকে ডাকবে তিনি তখন এসে হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দেবেন। কিন্তু বারবার ডাকা হলেও তিনি আসেননি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মনির হোসেন নিজের ক্রেডিট কার্ডের দেনা কোম্পানির অর্থ দিয়ে পরিশোধ করেছেন। অথচ ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট থেকে দেখা যায়, বড় বড় শপিংমল থেকে তিনি স্ত্রীর জন্য শাড়ি, গহনা, কসমেটিক ইত্যাদি কিনেছেন।
মনির হোসেনের দুটি পাসপোর্ট রয়েছে। একটি বাংলাদেশি ও একটি আমেরিকান, যা আমেরিকান ইমিগ্রেশন আইনের পরিপন্থী। কারণ আমেরিকান ও বাংলাদেশের মধ্যে ডুয়েল সিটিজেনশিপের চুক্তি নেই।
কোম্পানির উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, মনির হোসেন কর্মরত থাকাবস্থায় গোপন চুক্তির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল প্লাটসের মূল্য প্রতি টনে ৪০ থেকে ৫০ ডলার বেশি দেখিয়ে অবৈধ কমিশন নিয়েছেন। উল্লেখ্য, এইচ.আর কয়েলের বাজার মূল্য নির্ধারণ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্লাটস নামের একটি সংগঠন।
কেওয়াই স্টিলের সিইও জাবির হোসেন বলেন, মনির হোসেন খান আমেরিকায় আইএনজে ভেঞ্চারের নামে অ্যাপার্টমেন্ট, মিয়ামিতে ভিলা এবং জমি কিনেছেন। তিনি কনডোমিনিয়াম বা হোটেল ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন- এমন চিঠিও আমাদের কাছে আছে।
তিনি আরো বলেন, সেখানে ফ্ল্যাট-জমি কেনার নথিপত্রে তিনি বলেছেন, আমেরিকায় তার আয়ের কোনো উৎস নেই। মেরিনার্স ট্রান্সপোর্ট লি. নামে যে প্রতিষ্ঠান তার বাবা-ভাই মিলে করেছেন সেটাকে কেওয়াই স্টিলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান দাবি করে এর মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠিও দিয়েছেন।
উল্লেখখ্য, কেডিএস গ্রুপের ১৯টি প্রতিষ্ঠান মিলে মোট ৩০ হাজারের বেশি মানুষের পরিবার। কেডিএস গ্রুপ তাদের মুনাফার একটি বড় অংশ প্রতিবছর ব্যয় করে সিএসআরে।
কেওয়াই স্টিলের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা প্রতিবেদককে বলেন, মনির হোসেন খান কেওয়াই স্টিলের সব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। এর মধ্যে ছিল অ্যাকাউন্টস, বিদেশ থেকে কাঁচামাল ও রাসায়নিক আমদানি। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি উক্ত পদে ছিলেন। সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে তিনি দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কোম্পানির প্রায় ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২১