যশোর: বাংলা সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ, বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক, সনেট রচয়িতা মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৭ তম জন্মবার্ষিকী সোমবার (২৫ জানুয়ারি)।
উনবিংশ শতাব্দির বিশিষ্ট বাঙালি কবি ও নাট্যকার তথা বাংলা সাহিত্যের নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার সন্ধ্যায় যশোর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাগরদাঁড়ির মধুমঞ্চে তার জীবনীর ওপর আলোচনা সভা, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে, করোনার কারণে এবার হচ্ছে না; মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের সপ্তাহব্যাপী ‘মধুমেলা’।
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামের বিখ্যাত দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তার বাবা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত আর মা জাহ্নবী দেবী।
মধুসূদন দত্ত ছোটবেলায় কলকাতা যান। খিদিরপুর স্কুলে দুই বছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে তিনি হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। বাংলা, ফরাসি ও সংস্কৃত ভাষায়ও শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৪৪ সাল থেকে ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতার বিশব কলেজে অধ্যায়ন করেন। সেখানে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখেন। এরপর তিনি মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৮৬২ সালের ৯ জুন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি বিলেত যান। ১৮৬৬ সালে তিনি ব্যারিস্টারি পাস করেন।
মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি ইংরেজি সাহিত্যেও অসামান্য অবদান রাখায় বিশ্ববাসী এই ধীমান কবিকে মনে রেখেছে কৃতজ্ঞচিত্তে। পাশ্চাত্যের প্রতি আকর্ষণে মধুসূদন ১৮৪৩ সালে খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়ে ‘মাইকেল’ উপাধি ধারণ করেন। তিনি ইংরেজদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এটি রচনা করলে গ্রন্থটি তৎকালীন ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে। মধুসূদন থাকলে তাদের সাহিত্যকর্ম স্থান পাবে না এই সংশয় ইংরেজ সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রকটভাবে দানা বাধতে থাকে।
ইংরেজি সাহিত্যে তার কীর্তির যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় তিনি মনুক্ষুণ্ন হয়ে পড়েন। তখনই বুঝতে পারে মহাকবির ১৯৭তম জন্মবার্ষিকীন শেকড় ভোলার জ্বালা। ইংরেজি সাহিত্য থেকে ছিটকে পড়ে বন্ধু মহলের পরামর্শে মধুসূদন বাংলাভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে উপহার দেন শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, কৃষ্ণকুমারী, মেঘনাদবধ কাব্য, ব্রজঙ্গনা কাব্য, বীরঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশদপদী কবিতাবলী, হেক্টরবধ এর মতো বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম।
মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গণে পদার্পণ করেন। ১৮৫৯ সালে তিনি রচনা করেন ‘শর্মিষ্ঠা’ নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক। ১৮৬০ সালে রচনা করেন দুটি প্রহসন ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং পূর্ণাঙ্গ পদ্মাবতী নাটক। পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। একের পর এক রচনা করেন ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬১), ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)। মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায় তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেননি। তা ছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন অবস্থায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত মৃত্যুবরণ করেন।
মধুকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উৎযাপন কমিটির আহ্বায়ক জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, জন্মবার্ষিকী পালন উপলক্ষে সোমবার বিকেল তিনটায় উদ্বোধন, আলোচনাসভা ও সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আয়োজন শেষ করা হবে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার সপ্তাব্যাপী মধুমলার আয়োজন হচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শুধুমাত্র জন্মবার্ষিকী পালনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০২১
ইউজি/এএটি