রাজশাহী: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নার্সকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি তদন্তের জন্য ইতোমধ্যে কমিটি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম মামুন-অর-রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানেসথেসিয়া ডিপ্লোমা করছেন। সেখান থেকে কোর্স সম্পন্ন করতে রামেক হাসপাতালে আসেন।
এর আগে, ডা. মামুন ইসলামি ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস শেষ করেন। এরপর চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে যোগ দেন। ছুটি নিয়ে এখন অ্যানেসথেসিয়া কোর্স করছেন। রামেক হাসপাতালে এসে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্বে আছেন। সেখানেই গত ১৮-১৯ জানুয়ারি তিনি যৌন হয়রানির ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
এর পরদিন তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরপর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে রামক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রামেক হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৮ জানুয়ারি বেলা ১১টার দিকে আইসিইউতে ডা. মামুনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন সদ্য চাকরিতে যোগ দেওয়া একজন নার্স (২৫)। ডা. মামুন তখন হাতের কনুই দিয়ে ওই নার্সের স্পর্শকাতর অঙ্গে আঘাত করেন।
সেদিন বিষয়টি টের পেলেও চুপ করে থাকেন ওই নার্স। পরদিন ওই নার্স ডা. মামুনকে এনজি টিউব দিচ্ছিলেন। তখন ডা. মামুন তার হাত ধরেন। ওই নার্স দ্রুত সরে রিসিপশনে গিয়ে বসেন। এ সময় পেছন থেকে গিয়ে ডা. মামুন তার পিঠে এবং স্পর্শকাতর অঙ্গে স্পর্শ করেন। ক্রমাগত এমন যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ওই নার্স তার এক সহকর্মীকে জানান।
এরপর তিনি বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি ও সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ খলিলুর রহমানকে জানান। সেদিনই তারা আইসিইউতে ডা. মামুনের কাছে যান। তারা মামুনের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। ডা. মামুন তখন তাদের কাছে ‘স্যরি’ বলেন। তিনি বলেন, ‘স্যরি’ কথাটি তিনি হাসপাতাল পরিচালকের কাছে গিয়েও বলতে চান। এরপর তারা সবাই হাসপাতাল পরিচালকের কার্যালয়ে যান।
সেখানে নার্সরা ডা. মামুনের এমন আচরণের বিষয়টি হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীকে জানান। তখন ডা. মামুনও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার দোষ স্বীকার করেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ডা. মামুনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন হাসপাতাল পরিচালক।
এছাড়া একইসঙ্গে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন তিনি। তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন- রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. হাবিবুল্লা সরকার। ওই তদন্ত কমিটিতে একজন নার্সকেও সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। বাকি চারজনই চিকিৎসক।
এদিকে, নার্সদের অভিযোগ, একটি পক্ষ ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন করণীয় ঠিক করতে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন সোমবার দুপুরে জরুরি সভা করেছে। অভিযুক্ত চিকিৎসককে অব্যাহতি দেওয়া না হলে তারা কর্মসূচি হাতে নেবেন বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নূর লাকি বলেন, হাসপাতালে আমরা চাকরি করি। এখানেই একটা ঘটনা ঘটেছে। এখন কী হচ্ছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত এর চেয়ে বেশি আমরা কিছু বলতে চাচ্ছি না।
রামেক হাসপাতাল নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট আনোয়ারা খাতুন বলেন, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন এবং জানেন। তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পর তারা বিষয়টি দেখবেন।
আইসিইউ’র ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, যৌন হয়রানির একটা ঘটনা তিনিও শুনেছেন। সেদিন তিনি ছুটিতে ছিলেন। তাই সত্য-মিথ্যা বলতে পারছেন না।
অভিযুক্ত চিকিৎসক মামুন-অর-রহমান বলেন, একটা সমস্যা হয়েছে। সেটা তো অনেক রকমই হতে পারে। এ বিষয়ে আমি আর কী বলব? স্যারেরা তদন্ত করে দেখছেন।
রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আসলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া অভিযুক্ত চিকিৎসককে ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২১
এসএস/এনটি