সিলেট: একদিনের ব্যবধানে ২৫ প্রবাসীর করোনা রিপোর্ট বদলে গেল। দ্বিতীয় দফা নমুনা পরীক্ষায় ২৯ প্রবাসীর ২৫ জনেরই করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার খবরে তোলপাড় চলছে সিলেটে।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আরটি-পিসিআর ল্যাবে তাদের ২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রাতে ফলাফল আসে রিপোর্ট নেগেটিভ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আগে ঠিকমতো পদ্ধতি মেনে স্যাম্পল কালেকশন করা হয়নি। টেস্ট প্রক্রিয়া ইরোরও হতে পারে। অথবা ল্যাবেও সমস্যা থাকতে পারে। সর্বোপরি- ১৪ দিনের আগেও অনেকে করোনামুক্ত হতে পারেন। এটি অস্বাভাবিক নয়। বিভিন্ন কারণে একদিনের ব্যবধানে রিপোর্ট বদলাতে পারে।
গত ২১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে বিজি-২০২ বিমানের ফ্লাইটে দেশে ফিরেন ১৫৭ প্রবাসী। তাদের নগরের বিভিন্ন হোটেলে চার দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টিন শেষে গত রোববার প্রথমবার সীমান্তিকের ল্যাবে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হলে পরীক্ষায় ২৮ প্রবাসীর করোনা পজিটিভ আসে। এর আগে আসা আরেকজনের শরীরেও করোনা ধরা পড়ে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় ২৯ জনের নমুনা করা হলে তাদের ২৫ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই প্রবাসীদের শারীরিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করতে ঢাকা থেকে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) একটি বিশেষ টিম সিলেটে এসেছে। সাত সদস্যের ওই টিম মঙ্গলবার দুপুরে সিলেটে এসে পৌঁছায়।
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আইইডিসিআরের টিম করোনাক্রান্ত প্রবাসীদের শারীরিক তথ্য ও প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করবে। তারপর সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন সঠিক আছে কি না।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. ময়নুল হক বলেন, যুক্তরাজ্যফেরত প্রবাসীদের দেহে করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বহন করছেন কিনা, তা জানতে বাংলাদেশ সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এই ২৫ প্রবাসীর বিষয়ে দ্বিতীয় টেস্টে রিপোর্ট নেগেটিভ আসলেও তাদের কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে বুধবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের জানান, গত ২১ জানুয়ারি যুক্তরাজ্য থেকে বিজি-২০২ বিমানের ফ্লাইটে দেশে ফেরেন ১৫৭ প্রবাসী। তাদের নগরের বিভিন্ন হোটেলে চার দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কোয়ারেন্টিন শেষে করোনা পরীক্ষায় ২৮ প্রবাসীর করোনা পজিটিভ আসে। করোনা ভাইরাসের পরীক্ষায় এসব যাত্রী পজিটিভ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সিলেটসদর উপজেলার খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। করোনাক্রান্ত এসব যাত্রীদের ১৫ জন হোটেল নূরজাহানে, পাঁচ জন হোটেল ব্রিটানিয়ায়, চার জন হোটেল হলিগেইটে, তিন জন হোটেল লা রোজে এবং এক জন হোটেল হলি সাইডে ছিলেন।
যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনার নতুন ধরনের স্ট্রেইন আরও প্রাণঘাতি হতে পারে, এ জন্য সতর্কতা স্বরূপ দেশে আসা প্রবাসীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করে সরকার। পরে তা কমিয়ে চার দিনে আনা হয়। এ অবস্থায় এবার যুক্তরাজ্য ফেরতদের জন্য সাত দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়।
পুলিশ জানায়, গত ৪ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৪৪ জন প্রবাসী সিলেটে এসেছেন। কোয়ারেন্টিন শেষে নেগেটিভ সনদ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৩৭২ জন। বর্তমানে সরকার নির্ধারিত সিলেটের বিভিন্ন হোটেলে কোয়ারেন্টিনরত অবস্থায় করছেন ১৪৩ জন প্রবাসী।
বাংলাদেশ সময় ০১৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭,২০২১
এনইউ/কেএআর