ঢাকা: সাংবাদিক মহল বিরাগভাজন হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সেবা সম্পর্কে অসত্য প্রতিবেদন করে বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য মোজাফ্ফর হোসেনের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে আইনমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
তড়িঘড়ি করে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করতে গিয়ে পিতার নামের জায়গায় মায়ের নাম, প্রকৃত নামের জায়গায় অন্যজনের নাম, নামের বানান ভুল আসছে। এসব সংশোধনী নিয়ে হয়রানির অন্ত নেই। নির্ভুল জাতীয় পরিচয়পত্র জনগণ যাতে পায় তার সুব্যবস্থা হবে কিনা জানতে চান মোজাফ্ফর আহমেদ।
জবাবে আইনমন্ত্রী ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ভোটার তালিকার ডাটাবেজ গড়ে তোলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ টেকনিক্যাল জনবল না থাকায় এবং সময় স্বল্পতার কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়ে যায়। যার অধিকাংশই বাননজনিত ভুল। জাতিসংঘের ইউএনডিপি পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী ভোটারদের সংগৃহীত ডাটার ৯৯ দশমিক ৭ শতাংশ সঠিক মর্মে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়ছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের ওপর আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতার কারণে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে এ পর্যন্ত ১৪৪টি সংস্থা নাগরিকদের জাতীয় পরিচিতি নিশ্চিতকরণের জন্য চুক্তির করে এনআইডি সার্ভারের মাধ্যমে এনআইডি যাচাই সেবা গ্রহণ করছে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে পরিলক্ষিত ভুলসমূহের বিষয়ে আইন ও বিধি অনুসারে নির্বাচন কমিশন সংশোধনের সুযোগ দিলেও অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কারণে অনেকেই যথাসময়ে সেই সেবা নেননি। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রে লিপিবদ্ধ তথ্যাদির ক্ষেত্রে এখনো কিছু ভুল বিদ্যমান। তবে, সংশোধনের জন্য প্রাপ্ত অবেদনসমূহে চাওয়া দাবি অনেক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত। ফলে ওই সব আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যথাযথ প্রমাণপত্র/দলিলাদি দাখিলসহ ক্ষেত্রবিশেষ তদন্ত/পুনঃতদন্তের প্রয়োজন পড়ে। এ সব আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার উদ্ভব ঘটে এবং দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়। এ কারণে বিশেষ করে সাংবাদিক মহল বিরাগভাজন হয় এবং এ সংক্রান্ত সেবা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে, যা সম্পূর্ণ সত্য নয়।
এনআইডির সংশোধন/পরিবর্তনের আবেদন সাধারণভাবে ৩০ কার্যদিবসে নিষ্পত্তির কথা থাকলেও সঠিক দলিলাদি যুক্ত করে যৌক্তিক সংশোধনের আবেদন করলে ৫/৬ দিবসেই নিষ্পন্ন হয়ে থাকে বলে জানান আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জন্মতারিখ সংশোধন/পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নাগরিকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এনআইডিতে মুদ্রণ ভুল হলে ও আবেদনকারীর চাওয়া তথ্য নিবন্ধন ফরম অনুযায়ী সঠিক থাকলে (যত বছরের পার্থক্য হোক) এবং যাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষাগত সনদ আছে তাদের ক্ষেত্রে ৫/৭ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধন হয়ে থাকে। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কিছু কিছু নাগিরক উদ্দেশ্যমূলকভাবে জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে আবেদন করে থাকেন, যা একেবাবেই অযৌক্তিক। একই ব্যক্তি নিবন্ধনকালে একটি জন্মতারিখ দেন আবার সংশোধনের জন্য ভিন্ন জন্ম তারিখ উল্লেখিত জন্ম সনদ/উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়/কারিগরি/মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের সনদ জমা দিয়ে জন্ম তারিখের পরিবর্তন চান, যা সংশোধনের ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করে এবং ওই সনদে উল্লেখিত বয়সের সাথে ব্যক্তির বাস্তবিক বয়সের মিল থাকে না। চাকরি বেতন ও ভাতাদি আদেশ ২০১৫ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন নির্ধারণ/বেতন প্রাপ্তিতে এনআইডির তথ্যাদির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে কতিপয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিচয়পত্র আমলে না নিয়ে শুধু জন্ম সনদের ভিত্তিতে নিয়োগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
এসকে/এমজেএফ