ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কৃষি অফিসের আমন্ত্রণ ‘অনুগ্রহ করে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন’

জিসান আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
কৃষি অফিসের আমন্ত্রণ ‘অনুগ্রহ করে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন’

চুয়াডাঙ্গা: সরকারি অফিসে সেবা গ্রহণ নিয়ে অনেকেরই রয়েছে তিক্ত অভিজ্ঞতা। সেখানে সামান্য আপ্যায়ন তো কেবলই মনোইচ্ছা।

সরকারি অফিসে গিয়ে সেবা পেতে হিমশিম খাওয়ার বিপরীতে যদি এক কাপ চা খাওয়া যায় তাহলে কেমন হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সেবা প্রত্যাশীদের চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছে সরকারি এক কর্তা।  

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত ছাড়া অফিসে সেবা নিতে আসা যে কারও হাতে পৌঁছে যাচ্ছে এক কাপ চা। চা পান শেষ না হতেই কাঙ্ক্ষিত সেবা বুঝে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে সেবা গ্রহীতারা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসে প্রতিনিয়ত ঘটছে এমন ঘটনা। বিষয়টি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সেবা প্রত্যাশীরাও চা পানের ছবি ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আলোচনা লাইন দীর্ঘ করছে।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে এ অফিসে ৬০-৭০ জন সেবা প্রত্যাশী ভিড় জমায়। এরমধ্যে বেশিরভাগই কৃষক শ্রেণির। এছাড়া চাকরি প্রত্যাশী যুবকদেরও আনাগোনা রয়েছে এ কার্যালয়ে। যেকেউ যেকোনো কারণে ওই অফিসে গেলেই খালি মুখে ফেরেন না। সেবার সঙ্গে চা পানের আমন্ত্রণও গ্রহণ করছেন তারা। দামুড়হুদা কৃষি অফিসের সামনেই ঝুলছে একটি প্ল্যাকার্ড। যেখানে লেখা আছে ‘প্রিয় বন্ধু, আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করতে এসে অনুগ্রহ করে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন। ’

কথা হয় চিৎলা থেকে আসা আব্দুল আলীম নামে এক কৃষকের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে প্রায় সময়ই আমাকে এ অফিসে আসতে হয়। এর আগে সেবা নিতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে আমার। কিন্তু ইদানিং এ অফিসে আসলে কাজের কথা বলার আগেই হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর চা খেতে খেতেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে বাড়ি ফিরে যাই।

দামুড়হুদা উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বখতিয়ার হোসেন বকুল বাংলানিউজকে জানান, সরকারি অফিসগুলোতে নানা সময় সেবা প্রত্যাশীদের বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার খবর পাওয়া যায়। বিশেষ করে চাকরি প্রত্যাশী যুবকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সত্যায়িত করতে গেলে অনেক কর্মকর্তা তাদের ফিরিয়ে দেয় কিংবা অনাগ্রহ দেখায়। সেখান থেকে উপজেলা কৃষি অফিসার ভিন্ন দিকে হাঁটছে। কৃষকদের পাশাপাশি চাকরির আবেদনকারী যুবকদেরও ভিড় জমে এ অফিসে। যেটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। প্ল্যাকার্ড টানানোর পরই সাড়া ফেলে বিষয়টি। প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে এ ধরনের সরকারি কর্মকর্তা থাকলে সরকারি অফিসের প্রতি বিরূপ মনোভব অচিরেই বদলে যাবে।

দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৫ মাস আগে দামুড়হুদা উপজেলায় যোগদান করেন তিনি। কৃষকদের আনাগোনার পাশাপাশি প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য হারে চাকরি আবেদনকৃত যুবকদের কৃষি অফিসে আসতে দেখা যায়। এমন যুবকদের জন্য কিছু একটা আপ্যায়নের ভাবনা থেকেই এক কাপ চা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করি। এতে করে সেবা পাওয়া ও চা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হবে ধারণার।

তিনি আরো জানান, চা খাওয়ানোর জন্য প্রতিদিন খরচ খুবই কম। দিনে ৩ লিটার পরিমাণের চা পানের ব্যবস্থা করে রাখেন তিনি। এটা সামান্য আপ্যায়ন মাত্র। আগামীতে সেবা প্রত্যাশীদের জন্য ভিন্ন কিছু আয়োজন রাখার পরিকল্পনাও রয়েছে।

দামুড়হদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দিলারা রহমান জানান, বর্তমান সরকারের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সখ্যতা গড়ে তোলার। চেষ্টা করা হয় সাধারণ মানুষের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছানোর। প্রতিদিন উপজেলা পর্যায়ের উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক সেবা গ্রহীতারা সরকারি অফিসে ভিড় জমায়। মানুষের সেবার পাশাপাশি সামান্য আপ্যায়নের মাধ্যমে সরকারি অফিসের প্রতি বিরূপ ধারণা পরিবর্তন সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।