ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

জাল ভিসা যাচাইয়ে ওয়েবসাইটও বানায় তারা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
জাল ভিসা যাচাইয়ে ওয়েবসাইটও বানায় তারা!

ঢাকা: ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ডে পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা দিয়ে আসছিল একটি চক্র। আর ওইসব ভিসা যাচাইয়ে নিজেরাই ভুয়া কোম্পানির নামে নকল ওয়েবসাইট তৈরি করতো।

অভিনব এই কৌশলে জাল ভিসা দিয়ে লাখ লখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

এমন অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিবিআই বলছে, যারা প্রতারিত হন তারা সর্বস্বান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের কাছে আসেন না।

গ্রেফতাররা হলেন- শাহীন হাসান (৪৯), তারেক মাহমুদ গালিব (২৮) ও বকুল হোসেন ওরফে রতন হাওলাদার (৪৮)। তবে এ ঘটনায় পলাতক অপর মানবপাচারকারী মিজান ওরফে শাহেদ ছিদ্দিকী।

এসময় তাদের কাছ থেকে অভিযোগকারী ছয় জনেরসহ মোট ১৩টি পাসপোর্ট, দু’টি ল্যাপটপ, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের চেকবই, দু’টি প্লাস্টিকের ভুয়া সিল, টিম হর্টনস, মেনোনাইট নার্সিং হোমস ইনকরপোরেশনের নিয়োগপত্রসহ মানবপাচার ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআই সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।

তিনি বলেন, মানবপাচারকারী চক্রটি একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতো। তারা পাসপোর্টের নম্বর তাদের তৈরি ওয়েবসাইটে দিয়ে কনফার্ম করেন যে তাদের ভিসা সঠিক আছে এবং তাদের ওই দেশে জব ঠিক আছে।  

তিনি বলেন, চক্রটি এক ভুক্তভোগীকে আয়ারল্যান্ডের ভিসা দেওয়ার পর যাচাই করে দেখতে বলেন। ওই ভুক্তভোগী আয়ারল্যান্ডের ওয়েবসাইটে যাচাই করতে গেলে ফিরতি মেইলে জানতে পারেন ভিসাটি ভুয়া। সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করার কারণেই বিষয়টি ধরা পড়ে।

যদি যাচাই করতে ২-১ দিন দেরি করতো, তাহলে এর মধ্যে চক্রটি ওই ওয়েবসাইটও নকল করে বানিয়ে ফেলতো। তাদের এমন পরিকল্পনা ছিল।

এরপর প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ২ সেপ্টেম্বরে হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী মো. আলী চৌধুরী নামে একজন। তিনি অভিযোগ করেন, তিনিসহ তার আরও পাঁচ আত্মীয়কে আয়ারল্যান্ড নেওয়ার কথা বলে ছয়টি পাসপোর্ট ও প্রত্যেকের কাছ থেকে ৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। ভুয়া ভিসা দেওয়ার পর ভুক্তভোগীদের হোয়াটসঅ্যাপে ছবি পাঠিয়ে আরও টাকা দাবি করেছিল।

কিন্তু ভুক্তভোগীরা নিজেদের বিচক্ষণতায় প্রতারকদের কাছ থেকে পাওয়া ভিসাগুলো ভারতের নয়াদিল্লির আয়ারল্যান্ড অ্যাম্বেসিতে মেইল করে পাঠান। এতে অ্যাম্বেসি থেকে জানানো হয় ভিসাগুলো সঠিক নয়।

বিষয়টি পিবিআইকে জানালে আমরা তদন্তপূর্বক ঘটনার প্রমাণ পেয়ে তিনজনকে মতিঝিলের ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখা থেকে গ্রেফতার করি।

পিবিআই প্রধান আরো বলেন, গ্রেফতারের পর তারা জানায় ভুক্তভোগীদের পাসপোর্ট তাদের কাছে নেই। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর আসামি শাহেদ ছিদ্দিকীর বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পাসপোর্টসহ যাবতীয় প্রতারণার উপকরণ জব্দ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

তিনি বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের মাধ্যমে একজন ভুক্তভোগী লন্ডন যেতে চেয়েছিলেন ১২ লাখ টাকায়। ওই ভুক্তভোগী যাতে প্রতারিত না হয় সেজন্য তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণ তিনি ভাবছেন, ইতোমধ্যে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, বাকি ৪ লাখ টাকা না দিলে লন্ডন যেতে পারবেন না। প্রতারিত ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করে উল্টো আমাদের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

আমরা দেখছি যারা প্রতারিত হচ্ছেন তারা পুলিশের সহায়তা নিচ্ছেন না। কারণ তারা মনে করেন পুলিশের কাছে গেলে তারা লন্ডন যেতে পারবে না। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বস্বান্ত না হন ততক্ষণ পুলিশের কাছে তারা আসেন না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।