সিরাজগঞ্জ: সংবাদ ও প্রতিবেদন লেখায় দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে চলেছেন সিরাজগঞ্জের জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা কামাল। ২২ বছর ধরে একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা সম্পাদনাও করে আসছেন বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে।
কলম ধরা সেই হাতে এবার উঠেছে লোহা কাটার মেশিন। একটি অত্যাধুনিক গাড়ি তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। তার দীর্ঘদিনের প্রিয় প্রতিষ্ঠান দৈনিক যমুনা প্রবাহ পত্রিকা অফিসের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তুলেছেন ‘তারা মটর ও শিল্পযন্ত্র প্রকৌশল সংস্থা। পঞ্চাশোর্ধ বয়সেও তরুণের মতো রাতদিন নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
মোস্তফা কামালের স্বপ্ন সম্পূর্ণ বাংলাদেশি নকশায় দেশীয় গাড়ি তৈরি করে রাস্তায় নামানো। উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসলে আর বাইরের দেশের গাড়ি নয়, নিজের দেশেই নির্মাণ করা সম্ভব সকল প্রকার গাড়ি। দেশি যন্ত্র উৎপাদনে সকলকে উদ্বুদ্ধকরণের জন্য এই গাড়ি নির্মাণকাজে হাত দিয়েছেন মোস্তফা কামাল।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জা সড়কে দৈনিক যমুনা প্রবাহ কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় দুজন মিস্ত্রির সাথে নিজেই কাজ করছেন মোস্তফা কামাল। লোহা-লক্করের টুংটাং আওয়াজ আর ওয়েল্ডিং মেশিনের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো যমুনা প্রবাহ কার্যালয়।
এ সময় কথা হয় রবীন নামে ওই কারখানার এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি এভাবে গাড়ি তৈরি করা যেতে পারে। বসের (মোস্তফা কামাল) নির্দেশনা মতে আমরা ইতোমধ্যে গাড়ির মুল চেচিস তৈরি করতে পেরেছি।
এ সময় দৈনিক যমুনা প্রবাহ’র সম্পাদক মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলদেশে শতাব্দী ধরে চলা যানবাহন রিকশা ও টিউবওয়েল আমাকে দেশীয় ডিজাইনে গাড়ি তৈরিতে আকৃষ্ট করে। একটি সহজ, সাধারণ, জটিলতামুক্ত, টেকসই এবং স্বল্পমূল্যের গাড়ি তৈরি করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে ২০১৩ সালের শেষের দিকে সিএনজি ও পেট্রোলচালিত একটি গাড়ি তৈরি করেছিলাম। ওই গাড়িটির সামনে দুইজন এবং পেছনে চারজনসহ মোট ছয়জনের সিট ক্যাপাসিটি রয়েছে। পেছনের সিট ভাজ করে মালামাল পরিবহণ করা যায়। গাড়িটি তিন বছর চালিয়েছি। বর্তমানে এই গাড়িটি আরও উন্নত করার জন্য কাজ চলছে।
এছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিক গাড়ি তৈরির জন্য গত বছরের নভেম্বর থেকে কাজ শুরু করেছি। এটি একটি এলপিজি ও পেট্রোল চালিত ডাবল ক্যাপ পিকআপ হবে। গাড়ি তিনটি অংশে ভাগ হবে। যার প্রথম অংশে সামনের কেবিনে চালক ও একজন যাত্রী, এর পেছনের সিটে তিনজন যাত্রী বসতে পারবে। দ্বিতীয় অংশের কেবিন মাঝখানে। সেখানেও তিনজন যাত্রী বসতে পারবে। শেষে মালামাল পরিবহণের জন্য একটি একটি ডালা থাকবে। গাড়ির দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট (হাইচ মাইক্রোবাসের সমান) ও প্রস্থ পাঁচ ফুট হবে।
মোস্তফা কামাল বলেন, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় যাতে না করতে হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই গাড়িটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি হবে স্বল্পমূল্যে শক্তিশালী ও মজবুত একটি যান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে চেসিস নির্মাণের কাজ ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। জাপানি টয়োটা কোম্পানির ১৮০০ সিসি ৭কে ইঞ্জিনও চেসিসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে গাড়িটি সম্পূর্ণ প্রস্তুত করতে পারবো।
মোস্তফা কামাল আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অটো মোবাইল টিমের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। গাড়ির চুড়ান্ত উৎপাদন দেখার জন্য বুয়েটের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আশিকুর রহমান একমত হয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই বুয়েটের অটো মোবাইল টিমটি আমাদের কারখানায় আসবেন বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২১
কেএআর