ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাঘের শীতের রাতে পাড়া-মহল্লায় রসের শিরনি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২১
মাঘের শীতের রাতে পাড়া-মহল্লায় রসের শিরনি

বরিশাল: শীতের শুরুর দিকে বরিশালে তেমন একটা ঠাণ্ডার প্রকোপ না দেখা দিলেও। মাঘের শুরুতে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল বাতাস ঠাণ্ডার প্রকোপ বাড়িয়েছে।

কোনো কোনো দিন ‘মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ এ প্রবাদ বাক্যর মতো অবস্থাও ঘটেছে। প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও গ্রামীণ ও শহুরে জনজীবনকে ভিন্ন স্বাদের মাত্রা দিয়েছে। কারণ শীতের রাতে গরু কিংবা হাঁসের মাংস দিয়ে খিচুর খাওয়া আর খেজুর রস ও  রসে ভেজানো বিভিন্ন পদের পিঠা এবং রসের পায়েস খাওয়ার ধুম লেগে যায়।

মফস্বল আজ যান্ত্রিক শহরে রূপ নিলেও বরিশালে এর ভিন্নতা দেখা যায়নি কখনো। শীতের শুরু থেকে পারিবারিক আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু মহল কিংবা এলাকা ভিত্তিক অনেকে মিলে শীতের বিভিন্ন সব রকম খাবারের স্বাদ নিয়েছেন। বিশেষ করে মাঘ মাসে খেজুরের রসে ভেজানো চিতই পিঠা এবং রসের পায়েস খাওয়ার ধুম শুরু হয়েছে। রসের পায়েসকে বরিশালে শিরনি বলা হয়ে থাকে।

বরিশাল নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার এলাকার বাসিন্দা ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ছোট বেলা থেকেই স্থানীয়ভাবে শীতকালে খিচুরি, হাঁসের মাংস চালের তৈরি রুটি পিঠা এবং খেজুরের রস দিয়ে শিরনি খাওয়ার প্রচলন দেখে আসছি। হালের সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও এখনো পাড়া-মহল্লা ও বাড়িতে বাড়িতে শীত এলেই চলে এ আয়োজন। তবে আয়োজনের মূল উদ্যোক্তা থাকে তরুণ-তরুণীরা।

এদিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে রাতে এসব খাবারের আয়োজন করতে। যদিও এসব খাবারের মধ্যে শিরনি রান্নাকে কেন্দ্র করেই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উচ্ছাসের কোনো কমতি থাকে না। কারণ এটি তরুণ-তরুণীরা নিজেরাই বাড়ির ছাদ, উঠান, নয়তো সড়কের পাশেই খালি জায়গায় করে থাকেন। আর রসের শিরনি চুলা ও পাতিল ঘিরে আড্ডায় মাতোয়ারা হন তারা। যা সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

নগরের কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী সুজন হাওলাদার বলেন, বাস্তবতায় শীত এলে এলাকাভিত্তিক রাতের আয়োজনগুলো খুবই মজার হয়। আগে সব বয়সী মানুষের অংশগ্রহণ থাকলেও তা এখন কমেছে। বিশেষ করে এখনকার রসের শিরনির আয়োজনে দেখা যায় তরুণদের উদ্যোগ।

তিনি বলেন, আগে স্কুলের মাঠ ছিল, বাড়িতে বড় উঠান ছিল। কিন্তু শহুরে জীবনে ধীরে ধীরে স্কুলের মাঠ ছোট হয়ে গেছে, বাড়ির উঠানে ভবন হয়েছে। তাই এখন আয়োজনগুলো বাড়ির ছাদ নয়তো সড়কের খালি জায়গায় হয়ে থাকে। তবে সেই যে খুব ভোরে বেশ কয়েকজনে মিলে গ্রামের কোনো এক হাটে গিয়ে খেজুরের রস হাড়ি ভরে কিনে আনা। জ্বালানির লাকড়ি সংগ্রহ করা। এরপর রান্নার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে রাতের বেলা রসের শিরনি রান্না করার মজাটা আগের মতোই রয়ে গেছে।

নগরের গাজীবাড়ি এলাকার যুবক ইব্রাহিম ইমরান বলেন, শীতের রাতে রসের শিরনি খাওয়ার মজাটা অন্যরকম। চুলার আগুন পোহাতে পোহাতে গল্পের ছলে কখন যে রান্না হয়ে যায় সেটাই বোঝা দায়। আর বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে থাকা এ ধরনের খাবার রান্না করাটা অনেকটাই সহজও বটে। যেমন ১০ লিটার খেজুরের রস নিয়ে প্রথমে তা চুলার আগুনে ভালোভাবে জ্বালিয়ে নিতে হয়। রস একটু ঘন হয়ে এলে চিনি ও মোটা জাতের চাল তার মধ্যে পরিমাণ মতো দিতে হয়। চাল সিদ্ধ হলে এরপর পরিমাণ মতো কোড়ানো নারিকেল, লবণ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, তেজপাতা দিতে হবে। এরপর নাড়তে নাড়তে অল্প সময়ের মধ্যেই খেজুরের রসের শিরনি হয়ে যায়। তবে যারা রস সংগ্রহ করতে পারেন না, তারা খেজুরের গুড় দিয়েও শিরনি রান্না করতে পারেন। আর এটার প্রচলন এখন শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়।

তবে মনে রাখতে হবে রসের শিরনি ঠাণ্ডা হলে কিছুটা জমাট হয়ে আসবে, সেক্ষেত্রে এক ধরনের স্বাদ, আর গরম গরম আরেক ধরনের স্বাদ বলেও জানান ইব্রাহিম ইমরান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, জানুয়া‌রি ২৯, ২০২১
এমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।