ঢাকা: জন্ম হয় ছেলে হিসেবে, কিন্তু বয়ঃসন্ধিকালে ধীরে ধীরে মেয়েতে রূপান্তরিত হয়, যাদের আমরা ট্রান্সজেন্ডার, বৃহন্নলা, উভয় লিঙ্গ বা তৃতীয় লিঙ্গ অথবা হিজড়া হিসেবে বিবাচনা করি।
হিজড়া হওয়ার কারণে তারা নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্র এবং সমাজ থেকে প্রাপ্য অধিকারটুকু থেকে বঞ্চিত হন।
সম্প্রতি রাজধানীতে বসবাসকারি বেশ কয়েকজন হিজড়ার সঙ্গে কথা বললে, তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা সেবা পান না বলে অভিযোগ করেন।
তারা বলেন, শারীরিক অসুস্থায় তারা বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে টাকা দিয়ে সেবা নিতে গিয়েও বঞ্চনা এবং যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন।
তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে নারী এবং পুরুষদের চিকিৎসার জন্য ভিন্ন লাইন থাকে। কিন্তু হিজড়া হওয়ায় তারা নারীদের লাইনে দাঁড়ালে অন্যান্যরা তাদেরকে পুরুষদের লাইনে যেতে বলে, আবার পুরুষদের লাইনে দাঁড়ালেও একই সমস্যা হয়। এছাড়াও তাদের দেখে অনেকেই নানা রকম অঙ্গভঙ্গি এবং ঠাট্টা করে। অপরদিকে আবার তাদেরকে চিকিৎসক দেখলেও তাড়াতাড়ি ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বিদায় করে দেন। অসুস্থা হয়ে হাসাপাতালে থাকার জন্য বেড প্রয়োজন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা দেওয়া হয় না।
মোহাম্মদ পুর এলাকার হাসনা, মুনমুন এবং বাবুনি নামের তিনজন হিজড়া বলেন, চিকিৎসকরা তাদেরকে অনেক সময় ভয়ে কিংবা করুণা করে চিকিৎসা করেন। সরকারি হাসপাতালে নারীদের জন্য নারী এবং পুরুষদের জন্য পুরুষ চিকিৎসক থাকে, আমাদের মতো যারা আছেন, তারা কার কাছ থেকে চিকিৎসা নেবে বলেন। এসব হাসপাতালে এমন একজন চিকিৎসক থাকা দরকার যার কাছে আমরা মন খুলে আমাদের সকল শারীরিক সমস্যার কথা বলতে পারবো। একজন সাধারণ ডাক্তারের কাছে আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলতে পারি না।
ঢাকায় বসবাস করা আরেকজন হিজড়া নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, সমাজের অনেক মানুষই যৌন রোগের শিকার হন। আমাদের মতো হিজড়াদেরও এই সমস্যা হতে পারে। আমার যৌন কোনো সমস্যা হলে, আমি নারী না পুরুষ কোন ডাক্তারের যাব, কাকে আমার সমস্যার কথা বলবো। যৌন সমস্যায় কোন ডাক্তারের কাছে গেলে, তারা আমাদেরকে নানা ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন করেন। যার ফলে আমারা সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হই।
তিনি আরও বলেন, ডাক্তাররা কেন আমাদের এমন হেরাজমেন্ট করে, তারাতো কোনো ছেলে বা মেয়েকে এমন করার সাহস পায় না। ট্রান্সজেন্ডার হলেই কি সেক্সুয়াল হেরাজমেন্ট করতে হবে? অনেক স্থানেই আমাদের কাছ থেকে ওষুধের দামও বেশি নেওয়া হয়।
অধিকাংশ হিজড়া চিকিৎসা নিতে গিয়ে কোনো না কোনো হয়রানি, বঞ্চনা এবং অবহেলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। পাশাপাশি চিকিৎসা নিতে গিয়ে তাদের যেন ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও করেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
আরকেআর/এসআইএস